নাট্যকার মান্নান হীরা মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এ খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ। তিনি জানান, বাসায় অসুস্থতা অনুভব করলে তাঁকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে বুধবার রাত আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মান্নান হীরা দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন।
মান্নান হীরার জন্ম ১৯৫৬ সালে, সিরাজগঞ্জ জেলায়। মফস্বল শহর থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নাট্যচর্চার শুরু থেকেই তিনি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানত তিনি নাট্যকার হলেও মঞ্চের অন্যান্য শাখার সঙ্গেও তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সব সময় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও পথনাটক রচনায়। তাঁর নাটকের প্রধান উপাদান নিরন্ন মানুষ ও দরিদ্র জনপদ। বিশেষ করে তার পথনাটক বিশাল কৃষিজীবী মানুষ, তাদের উৎপাদন ও উপকরণ কেন্দ্র করে লেখা। তীক্ষ্ণ সংলাপের ঘাত–প্রতিঘাতে মান্নান হীরার নাটক যেমন অভিনয় উপযোগী, তেমনি সুখপাঠ্য। প্রচ্ছন্ন রাজনীতিকে কেন্দ্রে রেখে প্রেম ও অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক আবর্তিত হয় তাঁর নাটকে। প্রথাগত সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে ফেলতে অনুপ্রেরণা জোগায় তাঁর লেখা নাটক। ২০০৬ সালে তিনি নাটক শ্রেণিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
মঞ্চনাটকের পাশাপাশি পথনাটক রচনা করেন মান্নান হীরা। যে কজন নাট্যকার এ দেশের পথনাটককে সমৃদ্ধ করেছেন, মান্নান হীরা তাঁদের অন্যতম। তাঁর রচিত রাজনীতি–আশ্রয়ী পথনাটক প্রশংসিত হয়েছে দেশ–বিদেশে। তাঁর একাধিক নাটক অনূদিত হয়ে দিল্লি, হংকং, পাকিস্তান, নেপালসহ অনেক দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।
মান্নান হীরামান্নান হীরা
আরণ্যক নাট্যদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মান্নান হীরা রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে আছে ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘আদাব’, ‘ঘুমের মানুষ’ ‘মৃগনাভি’, ‘শেকল’, ‘জননী বীরাঙ্গনা’, ‘মণিমুক্তা’, ‘একাত্তরের রাজকন্যা’, ‘মেহেরজান, ‘ফুটপাত’, ‘রেফারী’, ‘বাংলার বাদশা’, ‘সুখদৈত্য’, ‘লাল জমিন’ প্রভৃতি। একটা সময়ে এসে চলচ্চিত্রেও মনোযোগী হন তিনি। ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন মান্নান হীরা। তার আগে মান্নান হীরা ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করেন।