থানায় বসেই সিনহা হত্যার পরিকল্পনা: র‌্যাব

টেকনাফ থানায় বসেই অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তাকে হত্যার দুই সপ্তাহে আগে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করা হয়। রোববার র‌্যাব কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

আশিক বিল্লাহ বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। এর মূল ভূমিকায় ছিলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ দাস। সিনহা টেকনাফে তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ভিডিও করার পরিকল্পনা করছিলেন। ওই সময় স্থানীয়রা সিনহাকে ওসি প্রদীপের ইয়ারা চোলাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্মের কথা জানান। অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে মেজর সিনহা ওসি প্রদীপের সাক্ষাৎকার নিতে চান। এসময় সিনহার সহযোগীরা তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ওসি প্রদীপ মেজর সিনহাকে এসব থেকে সরে আসতে বলেন। সিনহা রাজি না হলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

লে.কর্ণেল আশিক বিল্লাহ আরো জানান, ওসি প্রদীপ বুঝতে পারেন তিনি বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি মেজর সিনহাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও পুলিশের তিন সোর্স নুরুল আমিন, আয়াত ও নিজামউদ্দীনকে নিয়ে টেকনাফ থানায় বসে একটি মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে মেজর সিনহাকে হত্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা।

এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র‌্যাবকে।

এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলার ৩ জন স্বাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।

মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা হলেন- পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার ৩ স্বাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ ও টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা। এদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এছাড়া রোববার আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে অভিযুক্ত করে নতুন আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেবকে। চার্জশিটে মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাগর দে নামে এক পুলিশ সদস্য পলাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত বাকি ১৪ জন কারাগারে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.