মুনাফিক সম্পর্কে ইসলাম যা বলে…

যার ভেতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেই মুনাফিক। মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানত খেয়ানত করা হলো মুনাফিকের পরিচয়।

মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘তারা যখন ঈমানদার লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু নিরিবিলিতে যখন তারা তাদের শয়তানদের সঙ্গে একত্রিত হয়, তখন তারা বলেন, আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি, আর উহাদের সঙ্গে আমরা শুধু ঠাট্টাই করি মাত্র।’ (বাকারা ১৪)

‘তাদেরকে যখন বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেইদিকে এসো ও রাসূলের নীতি গ্রহণ কর, তখন এ মুনাফিকদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার নিকট আসতে ইতস্তত করছে ও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।’ (নিসা ৬১)

‘যেসব মুনাফিক ঈমানদার লোকদের বাদ দিয়ে কাফের লোকদেরকে নিজেদের বন্ধু ও সঙ্গীরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে। উহারা কি সম্মান লাভের সন্ধানে তাদের নিকটে যায়? অথচ সম্মানতো একমাত্র আল্লাহরই জন্য।’ (নিসা ১৩৮-১৩৯)

‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, আর আপনি তাদের সাহায্যকারী হিসেবে কখনও কাউকে পাবেন না।’ (নিসা ১৪৫)

‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা সকলেই পরস্পর অনুরূপ ভাবাপন্ন, তারা অন্যায় কাজের প্ররোচনা দেয় এবং ভাল ও ন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে এবং কল্যাণকর কাজ হতে নিজেদের হস্ত ফিরিয়ে রাখে। এরা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন। এ মুনাফিকরাই হল ফাসেক।’ (তওবা ৬৭)

‘এই মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহতায়ালা দোযখের আগুনের ওয়াদা করেছেন, যাতে তারা চিরদিন থাকবে, ইহাই তাদের উপযুক্ত। তাদের উপর আল্লাহর অভিসাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব।’ (তওবা ৬৮)

‘হে নবী! কাফির ও মুনাফিক উভয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন কর। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।’ (তওবা ৭৩)

মুনাফিক সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, আর তার কাছে কোন আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে। (বুখারী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন, চারটি দোষ যার মধ্যে থাকে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে উক্ত দোষগুলোর কোন একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। যথা- তার কাছে কোন আমানত রাখলে সে তার খেয়ানত করে, সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং সে ঝগড়া করলে গালাগালি দেয়। (বুখারী)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, এমন দুটি গুণ আছে যা মুনাফিকের মধ্যে একত্র হতে পারে না। যথা- সুস্বভাব এবং দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান। (মিকাত)

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) নবী করীম (সা.) হতে শুনে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ উম্মতের ব্যাপারে এমন সব মুনাফিক সম্পর্কে আমার আশংকা হয়, যারা কথা বলে সুকৌশলে, আর কাজ করে জুলুমের সঙ্গে। (বায়হাকী)

(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন)

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.