আলী যাকেরের জীবনী
অভিনেতা আলী যাকের। করোনা ভাইরাসের কাছে হেরে গেলেন তিনি। শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে ৭৬ বছরেই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন এই বহুমাত্রিক অভিনেতা। রেখে গেছেন তার অসংখ্য কর্ম ও সৃষ্টি।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্ম হয় তার। ১৯৭২ সালে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন। যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ঐ দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে।
‘গ্যালিলিও’ নাটকের মঞ্চে আলী যাকের ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।
মঞ্চে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বিদগ্ধ রমণী কুল’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে আলী’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘অচলায়তন’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘টেমপেস্ট’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও’।
এরপর টিভি চলে এসে অসীম জনপ্রিয়তা আলী যাকের। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে তার চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আকাশছোঁয়া। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও।
হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’ ও ‘আজ রবিবার’-এ অভিনয় করে তিনি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পান। একক নাটক ‘একদিন হঠাৎ’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘পাথর সময়’, ‘অচিনবৃক্ষ’, ‘আইসক্রিম’, ‘গণি মিয়ার পাথর’-এ অভিনয় করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পান।
অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। ‘আগামী’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘লালসালু’ ও ‘রাবেয়া’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দাগ কেটেছে মানুষের হৃদয়ে।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।
‘গ্যালিলিও’ নাটকের মঞ্চে আলী যাকের ও আসাদুজ্জামান নূর (ডানে)এক সাক্ষাৎকারে আলী যাকের জানিয়েছেন, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশী নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে আলী যাকের ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঐ দলে যোগ দেন সারা যাকের, যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের!
একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের।
১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।