ভেড়া পালনে বদলেছে জীবন
ভেড়া পালনে রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পাশাপাশি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। গ্রামের পরিবারগুলো ভেড়া পালনকে এখন আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভেড়া পালন অঞ্চলটির নারীদের আত্মবিশ্বাসও বাড়াচ্ছে।
গোদাগাড়ীর ৪৫ বছর বয়সী শিউলি বেগমের বাস ছোট্ট মাটির ঘরে। কিন্তু তিনি যখন তার আটটি ভেড়ার গায়ে পরম মমতা আর যত্নে হাত বুলিয়ে দেন, তখন তার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে। ভেড়াগুলো এখন যেন তার পরিবারের সদস্যদের মত হয়ে গেছে জানিয়ে শিউলি বলেন, ‘ওদের জন্যই আমরা বাঁচতে শিখেছি।’ বছরখানেক আগেও তার জীবন এতটা সহজ ছিল না বলে জানান তিনি।
শিউলি বেগম আরও বলেন, ‘ভেড়া পালন আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমি এখন স্বনির্ভর। ভবিষ্যতেও আরও ভালো কিছু করব বলে আমি আশাবাদী।’ তিনি বলেন, মার্চ মাসে মাত্র ৫টি ভেড়া দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে সে সংখ্যা বেড়ে ৮টিতে দাঁড়িয়েছে।
একই ধরনের গল্প শোনা গেল পবা উপজেলার মনি বেগমের (৪৩) মুখেও। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ৫টি ভেড়া দিয়ে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম শুরু করেন। এখন তার পালে ৯টি ভেড়া রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা আর পরিবারের সহায়তায় তার এ সাফল্য এসেছে বলে জানান মনি। তিনি বলেন, প্রতিটি নতুন বাচ্চা যেন নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় ৪০ জন প্রান্তিক খামারিকে ২০০টি ভেড়া দেওয়া হয়। এক বছরে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭-এ। জন্ম হয়েছে ১৭৭টি ভেড়ার।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সর্দার জানান, ৪০টি স্ট্যান্ডার্ড শেড নির্মাণ করে, ভেড়াগুলোর জন্য সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক ভেড়া পালন, আবাসন ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণ করে ৮৭.৫ শতাংশ নারী ও ৯২ শতাংশ ভূমিহীন পরিবার।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট ডিগ্রি কলেজের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মিতা মরমু (২০) বলেন, ভেড়া পালন শুধু অর্থ উপার্জনই নয়, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণেও বড় ভূমিকা রাখছে।’ তার সহপাঠীদের অনেকেই ভেড়া পালন করে সফল হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৭ সাল থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৪৫ জন ছাত্রীকে ভেড়া দেওয়া হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা।

Comments are closed.