নবীজী (স) এর মানবিকতা- একজন মহান মানবের জীবনের বাস্তব চিত্র

নবীজী (স) এর মানবিকতা- একজন মহান মানবের জীবনের বাস্তব চিত্র

নবীজী (স) এর মানবিকতা- একজন মহান মানবের জীবনের বাস্তব চিত্র

ইসলামের ইতিহাসে নবী মুহাম্মদ (স)-এর জীবন শুধু ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে নয়, বরং মানবিক গুণাবলী ও সমমর্মিতার এক অসামান্য উদাহরণ। তাঁর জীবন, আচরণ ও সম্পর্ক আমাদের শেখায় কিভাবে একজন ব্যক্তি অন্যদের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং স্নেহ প্রদর্শন করতে পারে। অনেক সময়, আমরা বাইরে গিয়ে মানুষের কাছে একটি ভাবমূর্তি তৈরি করি, কিন্তু আমাদের প্রকৃত চরিত্র এবং মানবিকতা আমাদের পরিবারের সদস্যদের কাছেই সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ পায়। নবীজী (স) এর জীবনও এর বাইরে নয়। তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা আমাদের সামনে আসে, যা তাঁর অসীম সমমর্মিতা এবং মানবিকতার পরিচয় দেয়।

জায়েদ ইবনে হারিসার ঘটনা

নবীজী (স) যখন বিবি খাদিজাকে বিয়ে করেছিলেন, তখন তাঁর জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, যা তাঁর মানবিকতা ও সমমর্মিতার গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে। ঘটনা হলো, জায়েদ ইবনে হারিসা, যিনি কাব গোত্রের এক যুবক ছিলেন, তার বাবা-মায়ের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। একসময় দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে তিনি বন্দি হয়ে পড়েন। বিজয়ী গোত্র তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়।

এ সময় জায়েদকে বিবি খাদিজার একজন আত্মীয় কিনে নিয়ে আসেন এবং তাকে নবীজী (স)-এর দাস হিসেবে দেন। তবে, জায়েদের পরিবার তাকে খুঁজতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে খোঁজার পর, জায়েদের বাবা জানলেন যে, তাঁর ছেলে মুহাম্মদ (স)-এর কাছে আছে, যিনি তখনও নবী হিসেবে প্রবর্তিত হননি।

নবীজী (স)-এর প্রস্তাব: মানবিকতা ও সমমর্মিতা

জায়েদের বাবা তার ভাইকে নিয়ে মক্কায় এসে নবীজী (স)-এর কাছে পৌঁছান। তিনি নবীজী (স)-কে বলেন, “আপনার কাছে আমার ছেলে দাস হিসেবে আছে। আমি আপনাকে যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত, যদি আপনি তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।” তখন নবীজী (স) হাসিমুখে বলেন, “আপনি আমাকে যে প্রস্তাব দিলেন, আমি আপনাকে আরেকটা প্রস্তাব দিচ্ছি। আমি আপনার ছেলেকে মুক্ত করে দিতে প্রস্তুত। আপনি তাঁর সাথে কথা বলুন, তিনি যদি আপনার কাছে যেতে চান, তবে সে যেতে পারবে। তবে, যদি সে আমার সাথে থাকতে চায়, তাহলে আপনাকে আপত্তি করতে হবে না, কারণ আমি তাকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করব।

জায়েদের বাবা এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন, কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর ছেলে তার কথা শুনবে এবং তাকে ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু যখন জায়েদকে এই প্রস্তাব দেয়া হলো, তিনি নিজের বাবার কাছে না গিয়ে নবীজী (স)-এর সাথে থাকতে পছন্দ করেন। নবীজী (স) তাঁকে কাবা শরীফে নিয়ে গিয়ে তাঁর পালকপুত্র হিসেবে ঘোষণা দেন।

মানবিকতার প্রতিচ্ছবি

এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি নবীজী (স)-এর মানবিকতা ও সমমর্মিতার গভীরতা। তিনি একজন দাসকে, যে তার নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে পারে, এমন একটি সুযোগ দিলেন, তবুও জায়েদ তাঁর সাথে থাকতে চাইলেন। এটি প্রমাণ করে যে, নবীজী (স) কেবল একজন শাসক বা ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, বরং তিনি মানুষের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে জানতেন। তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা, সমমর্মিতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে তিনি অন্যদের হৃদয় জয় করতে সক্ষম ছিলেন।

এ ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, নবীজী (স) কেবল নিজের পরিবার বা সমাজের প্রতি নয়, বরং সবার প্রতি আন্তরিকতা, সদাচার এবং প্রেম প্রদর্শন করতেন। তাঁর এই গুণগুলোই তাঁকে মানবতার এক মহৎ প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

 

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.