১৫ মাসের নৃশংসতার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিলিস্তিনে

যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ায় অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন টানা ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি বর্বরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রবিবার (১৯ জানুয়ারি) ছিল গাজার বাসিন্দাদের উদযাপনের দিন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সেসব এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন যেখানে তাদের যাওয়ার কথা ছিল না। যেমন পূর্বাঞ্চল, জাবালিয়া এবং রাফাহ; যেসব এলাকা সরাসরি ইসরাইলের স্থল আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং খান ইউনিসের দক্ষিণ অঞ্চলের হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাফায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তাদের সবার চোখে-মুখে আজ উচ্ছ্বাস।

নিজেদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে জেনেও অনেক ফিলিস্তিনি সেখানে ফিরতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, বাড়ি না থাকলেও ধ্বংসস্তূপের ওপরে তাঁবু টানিয়ে থাকবেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ২০২৩ সালে হামাস-ইসরাইল সংঘাত শুরুর পর প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তীব্র ঠান্ডায় তাঁবুর নিচে, বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মানবেতর দিন পার করছেন।

তাদের একজন বলেন, ‘আমার মন আনন্দে ভরে উঠেছে। আমি কোনো ক্লান্তি অনুভব করছি না। আমার বয়স ৫৫ হলেও আমি দৌঁড়াচ্ছি, নিজের বাড়িতে ফিরব বলে।’

আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। যারা গাজার দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছেন তারা উত্তরে আমাদের কাছে আসুক। যুদ্ধবিরতিতে আমি আনন্দিত।’

প্রসঙ্গত, প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বের পর স্থানীয় সময় রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মধ্যস্থতাকারী কাতারও। এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দেয়ার আগে, এই চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তির জন্য বন্দিদের নামের তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রথম ধাপে যে তিন নারী মুক্তি পেতে যাচ্ছেন তাদের পরিবারকে এ বিষয়ে অবহিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানানো হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। এর আগে তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস।

এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রথমদিনে তিন ইসরাইলি জিম্মি রোমি গনেন, ডোরন স্টেইন ব্রেচার এবং এমিলি দামারিকে মুক্তি দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর তাদের রেড ক্রসিংয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে, তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

একই সঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি পাবে। পাশাপাশি ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। এর মাধ্যমে ‘টেকসই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে- যা শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। একই সঙ্গে মৃত ইসরাইলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.