চীন-ভারত যুদ্ধে প্রেম ভেঙে গেলো শীর্ষ ধনী রতন টাটার!
ভারতের শীর্ষধনী রতন টাটার জীবনী যেনো সিনেমার গল্পের মত। বাবা ছেড়ে যাওয়ার পর অসহায় মা ও ছেলেকে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দাদী। সেই ছেলে বড় হয়ে খুব ছোট একটা চাকরি নিয়ে ঢোকেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে, তারপর এক সময়ে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে বসেন নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে। তারপর ছোট একটি লোকাল কোম্পানীকে বিরাট এক আন্তর্জাতিক কোম্পানীতে পরিণত করেন। ২১ বছরের মিশনে পৃথিবীর ৬টি মহাদেশের ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা। তাঁর অবসরের সময়ে কোম্পানীর বার্ষিক আয় ছিল ১০ হাজার কোটি ডলার! আর তাঁর নিজের মোট সম্পদের পরিমান ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি!
জীবনের ব্যক্তিগত তথ্য কখনোই প্রকাশ্যে আনতে চান না তারকারা। একারণে অন্তরালেই থেকে যায় তাদের বেশিরভাগ সুখ-দুঃখ। তবে এক্ষেত্রে বরাবরই ব্যতিক্রম রতন টাটা। এবার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে মুখ খুললেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমিরেটাস।
বিয়ে করেননি রতন টাটা। আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, যৌবনে একজনকে ভালো লেগেছিল। তবে সে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। কেন পূর্ণতা পায়নি, এবার সেই তথ্য জানালেন ‘হিউম্যানস অব বোম্বে’ নামের একটি ফেসবুক পেজে। সেখানে নিজের বাবা-মায়ের ডিভোর্স নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন ৮২ বছর বয়সী রতন টাটা।
রতন টাটা লিখেছেন, বেশ হাসিখুশিই ছোটবেলা কেটেছে। বড় হতেই দেখতে হলো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ। তখনকার দিনে বিবাহবিচ্ছেদের চল ছিল না। বাবা-মার বিচ্ছেদের পর দাদি আমার দায়িত্ব নেন। মা ফের বিয়ে করার পর স্কুলে বন্ধুদের কাছে কটু কথা শুনতে হতো। কিন্তু দাদি আমাকে মূল্যবোধ ধরে রাখতে শিখিয়েছিলেন।
তিনি লিখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লন্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম। বেশ মনে আছে, আমার ও ভাইয়ের মধ্যে মূল্যবোধ গেঁথে দিয়েছিলেন দাদি। সবসময় বলতেন, এটা বলবে না, এটা করবে না, সম্মানটাই বড়ো। উনি সবসময় আমার পাশে থেকেছেন।
বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও লিখেছেন রতন টাটা। তিনি বলেন, ভায়োলিন শিখতে চেয়েছিলাম, বাবা পিয়ানো শিখতে বলেন। আমি স্থপতি হয়ে চেয়েছিলাম, তবে বাবা চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হই। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে পড়তে চেয়েছিলাম, উনি জোর করছিলেন বিট্রেনের কলেজে পড়তে।
সেসময় দাদি না থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হতো না। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হলেও বিষয় বদলে আর্কিটেকচার নিয়েছিলাম। কলেজের পর লস অ্যাঞ্জেলসেই শুরু করলাম চাকরি। দু বছর সেখানে ছিলাম। নিজের গাড়িও ছিল। চাকরিটা বড় ভালোবাসতাম।
এরপরই নিজের ভালোবাসার মানুষটির কথা স্মরণ করেছেন রতন টাটা। বলেন, লস অ্যাঞ্জেলসে প্রেমে পড়েছিলাম। বিয়ে প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু তখনই অসুস্থ দাদির জন্য সাময়িকভাবে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম।
ভেবেছিলাম, যাকে ভালোবাসি সে ভারতে চলে আসবে। তবে ১৯৬২ সালে ইন্দো-চীন যুদ্ধ চলায় তার অভিভাবকরা এদেশে আসার অনুমতি দেয়নি। তখনই ভেঙে যায় আমাদের সম্পর্ক।