৯০ ফিলিস্তিনি নারী-শিশুকে আনন্দ, উচ্ছ্বাসে বরণ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ৯০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু ফিরল বাড়িতে। আনন্দ, উচ্ছ্বাসে তাদের বরণ করে নিলো হাজারো মানুষ। গাজায় জিম্মি তিন ইসরায়েলিকে হামাস ছেড়ে দেওয়ার পর ইসরায়েলও তাদের কারাগারে বন্দি থাকা ৯০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দিয়েছে।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে রেডক্রসের বাস তাদেরকে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় নিয়ে আসে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

কোনো ধরনের উদ্যাপন থাকবে না ইসরায়েলি বাহিনীর এমন সতর্কতা সত্ত্বেও আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব আর সমর্থকসহ হাজারো উচ্ছ্বসিত মানুষের বিশাল এক ভিড বাড়ি ফিরে আসা এ ফিলিস্তিনিদের বরণ করে নেয়।

এদিন দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের ৬৯ নারী ও ২১ কিশোর বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। কিশোরদের কারও কারও বয়স মাত্র ১২।

মুক্তি পাওয়া নারীদের মধ্যে আছেন ৬২ বছর বয়সী খালিদা জারারও। বামপন্থি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টানের শীর্ষস্থানীয় এ সদস্যকে ‘প্রশাসনিক আটকাদেশ’ এর আওতায় ছয় মাস নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছিল।

‘প্রশাসনিক আটকাদেশ’ এর আওতায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ বা আদালতের রায় ছাড়াই সন্দেহভাজন যে কাউকে জেলে আটকে রাখতে পারে।

আছেন সাংবাদিক বুশরা আল-তাউইলও, ইসরায়েল যাকে ২০২৪ সালের মার্চে জেলে পাঠিয়েছিল।

এ নারী জানান, তার যাত্রা শুরু হয় রবিবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৩টার দিকে। এ সময় তাকে এক কারাগারে অন্য এক কারাগারে এনে মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দিদের সাথে রাখা হয়। অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। যদিও যে কোনা মুহূর্তে যে আমাদের মুক্তি দেওয়া সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত ছিলাম,” বলেছেন তিনি।

তাউইলের বাবাও এখন ইসরায়েলের কারাগারে। শিগগিরই তাকেও ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান এ সাংবাদিক। আমি তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তিনি এখনো বন্দি, চুক্তির অংশ হিসেবে তিনিও মুক্তি পাবেন মাত্রই এই সুসংবাদ পেয়েছি আমি,” বলেন তাউইল।

খালিদা, বুশরাসহ গভীর রাতে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ৯০ নারী-শিশু দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় এসে পৌঁছালে আবেগাপ্লুত আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা মুক্ত ফিলিস্তিনিদের কাউকে কাউকে কাঁধেও তুলে নেন; কারো চোখে পানি, চলছে কোলাকুলি। থেকে থেকে পাওয়া যাচ্ছে চিৎকার, কেউ বাজাচ্ছেন শিস।

উপস্থিত অনেকের হাতে এসময় ফাতাহ, হামাস, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া গোষ্ঠীগুলোর পতাকাও ছিল।

“আজ যারা মুক্তি পেয়েছে তারা আমাদের কাছে পরিবারের সদস্যই। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তারা আমাদেরই অংশ। তাদেরকে দেখতে ও আবেগ ধারণ করতে আজ আমরা এখানে এসেছি,” অন্য এক বার্তা সংস্থাকে এমনটাই বলেছেন সেখানে উপস্থিত ২৩ বছর বয়সী তরুণী আমান্দা আবু শার্খ।

বন্দি অনেককে ছেড়ে দেওয়া হবে শুনে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে এসে এসেছেন রামাল্লার ২০ বছর বয়সী তরুণ মুহাম্মদ।

কিছুদিন আগে তিনি নিজেই ইসরায়েলের ওফার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। বন্দিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারবে, এটা ভেবেই আনন্দিত তিনি।

“কারাগারে থাকা অনেক লোককে জানতাম আমি। তাদের মধ্যে অনেক নিষ্পাপ মানুষ এবং নারী ও শিশু আছে,” বলেছেন তিনি।

আল জাজিরা জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এবারই প্রথম বন্দি বিনিময় হলো।

এবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ঠিক কত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সংখ্যাটা এক হাজার থেকে দুই হাজারের কাছাকাছি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৫ মাসে ইসরায়েলের হামলায় ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তেল আবিবের হামলা ও বাড়ি ছাড়ার নির্দেশনায় গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.