৩৫ স্টেশনে ঘুরবে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর, ফ্রি দেখা যাবে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার অসামান্য কর্মজীবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর।
বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্রডগেজ এবং একটি মিটারগেজ কোচ নিয়ে তৈরি করেছে জাদুঘরটি। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ বিশেষ কোচে নির্মিত অত্যাধুনিক জাদুঘর দুটি দেশের ৩৫টি রেল স্টেশনে প্রদর্শিত হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কোনো স্টেশনে একদিন আবার কোনো স্টেশনে পাঁচ দিন পর্যন্ত অবস্থান করবে বিশেষ জাদুঘর দুটি।
জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। সোমবার (১ আগস্ট) থেকে এটি চালু করা হচ্ছে। এর আগে ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরটি গত ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রোববার এর শিডিউল প্রকাশ করেছে। এতে জানানো হয়েছে, জাদুঘরটি কোন রেল স্টেশনে কত দিন থাকবে তার সময়সূচি। দুটি কোচের একটি থাকবে দেশের পূর্বাঞ্চলে অন্যটি থাকবে পশ্চিমাঞ্চলের রেল স্টেশনে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাদুঘরটি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। জাদুঘর দুটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর ১২টি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে।
কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে কিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি এবং গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে উঠার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে আরও রয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আুদায়ের সংগ্রামে অবর্ননীয় নির্যাতন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস। আরেক পাশের দেয়ালে থাকা ছয় ভাগে রয়েছে, দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতদের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। দেখার সঙ্গে সঙ্গে যেন দর্শকরা ভালোভাবে শুনতে পারেন সেজন্য রাখা হয়েছে হেডফোনের ব্যবস্থা। কোচের এক প্রান্তে রাখা একটি বড় এলইডিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ।
এছাড়া শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বইও রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে। জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা একটি বুক শেলফ রয়েছে। সেখানে প্রায় একশ বই রয়েছে।
জাদুঘরটিতে ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে (শেখ হাসিনা) নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। যা দর্শনার্থীদের বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
জাদুঘরের ভেতরে কৃত্রিম ফুলের বাগান দর্শকদের আকৃষ্ট করবে সহজেই। আরও রয়েছে জাতির পিতার ব্যবহৃত পোশাক ও জিনিসপত্রের প্রতিকৃতি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, স্মৃতিসৌধ ও তার হাতে লেখা চিঠি। ভ্রাম্যমাণ এ জাদুঘরে একটি ডিসপ্লে রয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হবে।
রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা ‘তুমি ইতিহাস জুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক এই বাংলার তুমি শোষকের যম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার’ গানটিকে জাদুঘরের থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরালের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাদুঘর নির্মাণের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন তুলে ধরতে আমাদের এমন উদ্যোগ। একটি মাত্র কোচে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। সবার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে। সাধারণত মানুষ জাদুঘরের কাছে যায় কিন্তু আমাদের ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর মানুষের কাছে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য কর্মজীবন তুলে ধরবে।
মানুষকে জানতে এবং জাদুঘর পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানাতে স্টেশনে জাদুঘর পৌঁছানোর আগে প্রচারণা চালাবে রেলওয়ে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই জাদুঘর সবাই ঘুরে দেখতে পারবেন।
জাদুঘরের শিডিউল
শিডিউল অনুযায়ী দেখা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে একটি জাদুঘর থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, ভাটিয়ারী স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৭ আগস্ট, সীতাকুণ্ড স্টেশনে থাকবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট, চিনকিআস্তানা স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১১ আগস্ট, ফেনী জংশনে থাকবে ১১ থেকে ১৫ আগস্ট, গুনবতী স্টেশনে থাকবে ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট, নাঙ্গলকোর্ট স্টেশনে থাকবে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট, লাকসাম জংশনে থাকবে ১৮ থেকে ২৩ আগস্ট, চৌমুহনী স্টেশনে থাকবে ২৪ থেকে ২৫ আগস্ট, মাইজদীকোর্ট স্টেশনে থাকবে ২৬ থেকে ২৭ আগস্ট, নোয়াখালী স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুর স্টেশনে থাকবে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৪ নভেম্বর, আখাউড়া স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৮ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, ভৈরব স্টেশনে থাকবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর, নরসিংদী স্টেশনে থাকবে ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর, টঙ্গী জংশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকবে ১৭ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে আরেকটি কোচ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গোপালগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, কাসিয়ানি স্টেশনে থাকবে ৬ থেকে ৭ আগস্ট, ভাটিয়াপাড়া ঘাট স্টেশনে থাকবেন ৯ থেকে ১০ আগস্ট, মধুখালী জংশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ আগস্ট, রাজবাড়ী স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৭ আগস্ট, ফরিদপুর স্টেশনে থাকবে ১৯ থেকে ২০ আগস্ট, পাংশা স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ আগস্ট, কুমারখালী স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ আগস্ট, কালুখালী জংশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, কুষ্টিয়া স্টেশনে থাকবে ৩০ থেকে ৩১ আগস্ট, খুলনা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৭ নভেম্বর, দৌলতপুর স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, নোয়াপাড়া স্টেশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর, যশোর স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর, বেনাপোল স্টেশনে থাকবে ২০ থেকে ২১ নভেম্বর, নাভারণ স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর, মোবারকগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর, দর্শনা স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ নভেম্বর এবং চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।