৩৩ বছর ধরে বিনা মূল্যে মেসওয়াক বিতরণ!
কালো বর্ণ চেহারা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। গায়ে তিন পকেটবিশিষ্ট হাফশার্ট। পরনে কালো রঙের ঢিলেঢালা প্যান্ট।
পায়ে ছেঁড়া-ফাটা স্যান্ডেল। ঘাড়ে গামছা ও মাথায় সাদা টুপি। হাতে ঝোলানো ব্যাগ। হাত বাড়িয়ে সালাম দেন।
প্রথমে দেখে মনে হবে সাহায্যপ্রার্থী। কিন্তু না। সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান না।
মঙ্গলবার (২০ মার্চ) বিকেলে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি বাজারে এমনই এক ব্যক্তির দেখা মেলে।
নাম তাঁর মাহাতাব আলী (৬১)। তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চকমাহাপুর গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। মাহাতাব আলী পেশায় ছিলেন ওয়াচম্যান (প্রহরী)। দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কৃষ্ণা খামারে। তবে বয়সের ভারে তা-ও এখন আর করতে পারেন না।
তাই নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। তবে সব সমস্যা ফেলে রমজান মাস এলেই তিনি রোজাদারদের খিদমতে বিনা মূল্যে বিতরণ করেন মেসওয়াক (দাঁতন)। এ কাজ তিনি ৩৩ বছর ধরে করে আসছেন।
মাহাতাব আলী জানান, দারিদ্র্যের কশাঘাতে ভাগ্যে পড়ালেখা জোটেনি তাঁর। সেই ছোটবেলা থেকে রমজান মাসে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়ে বসে থাকতেন। বিকেল হলেই সবাই তাঁকে মেসওয়াক (দাঁতন) নিয়ে আসতে হুকুম করতেন। সেই থেকে মানবসেবার অদ্ভুত এক নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। তিনি মনে করেন, কেউ হুকুম করার আগেই যদি তার মেসওয়াকটা হাতের কাছে এনে দেওয়া যায়, তাহলে লোকটি বোধ হয় আরো বেশি খুশি হবে। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর মেসওয়াক বিতরণ শুরু। এরপর ৩৩ বছর ধরে রমজান মাসে মেসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান বাগাতিপাড়া উপজেলার নানা প্রান্তে। বিনা মূল্যে বিতরণ করেন মেসওয়াক। এতেই তাঁর আনন্দ। মূলত তিনি নিমগাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক বানান। এ কাজের জন্য নিমগাছের মালিকরা তাঁকে দাওয়াত করে ডেকে নিয়ে যান। তা ছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য ঔষধি গাছ আপাংয়ের ডালের বিশেষ মেসওয়াক তৈরি করেন তিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজাদারদের মাঝে মেসওয়াক বিতরণ করছেন বলেও জানান তিনি। তিনি যেন সুস্থ থেকে আরো মেসওয়াক বিতরণ করতে পারেন সে জন্য সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
পৌর এলাকার বাসিন্দা রেজাউন্নবী বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে দেখছি পুরো রমজান মাস মাহাতাব রোজাদারদের বিনা মূল্যে মেসওয়াক দিয়ে খিদমত করেন। এই বয়সে বিনা টাকায় সেবাদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।’