১৫ বছরে পাচার ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, ফেরত আনাই চ্যালেঞ্জ
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ যতটা সহজে দেশের বাইরে গেছে, ফিরিয়ে আনা ততটাই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর পরামর্শ, সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে পারে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর।
অর্থপাচার একটি জটিল ও সূক্ষ্ম আর্থিক অপরাধ। অর্থপাচার চিহ্নিত করা, সঠিক তথ্য উদঘাটন, পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ অপরাধটি করা হয় সুকৌশলে। আমদানি, রপ্তানি, বড় প্রকল্পের কেনাকাটার আড়ালে দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়ে থাকে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। যা অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। কমিটির তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি বছর পাচার হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণের পাঁচ ভাগ টাকা পাচার হয়েছে। বিদেশি যত ঋণ ও বিনিয়োগ দেশে আসে তার দ্বিগুণ অর্থ পাচার হচ্ছে বলে দাবি করছেন অর্থনীতিবিদরা।
গত দেড় যুগে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আশাও প্রকাশ করেন পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে বিচার করার।
বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আলোকে পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনা কতটা সম্ভব ও বাস্তবসম্মত। এর জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, লম্বা প্রক্রিয়া তবে সম্ভব। লেগে থাকতে হবে সরকারকে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারে নির্দিষ্ট আদালত থেকে আগে প্রমাণ হতে হবে কি পরিমাণ টাকা তার মাধ্যমে পাচার হয়েছে। দেখা গেল সত্যি পাচার হয়েছে তখন এই রায় নিয়ে গিয়ে বিদেশে আবার আরেকটা মামলা করতে হবে। তারা আবার রায় দিবে। এই আইনের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেয়া হবে।’
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম মনে করেন, শুধু আইন দিয়ে পাচারকৃত টাকা আনা যতটা সহজ বলা হচ্ছে, ততটা কঠিন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সুইজারল্যান্ডসসহ যেসব দেশে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে তাদের সঙ্গে শক্তিশালী চুক্তি করা খুবই জরুরি।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘তার দেশের নিজেরদের ইন্টারেস্ট থাকে খুব সহজ নয় বিষয়টা। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এদের সাথে অর্থ পাচারের টাকা ফেরত আনার জন্য তেমন কোনো চুক্তি নাই। বন্দিবিনিময় চুক্তির মতো অবৈধ টাকা ফেরত আনার চুক্তি করতে হবে।’
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংকের আইনে তার যে ক্ষমতা দেয়া আছে তা যদি চূড়ান্তভাবে প্রয়োগ করে তাহলে অনেক কিছু করা সম্ভব।’
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর আলোকে আইনজীবীরা বলছেন, অর্থপাচার রোধ করার জন্য যতটা ক্ষমতা ও সক্ষমতা দরকার তার পুরোটাই রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার তেমন কোনো নজির নেই। শুধু সিঙ্গাপুর থেকে একবার ৯৩০ কোটি টাকা ফেরত আনতে পেরেছিলো সরকার।