হৃদয়ের রক্তমাখা শার্ট দেখে কাঁদলেন মা–বাবা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

‘আমার থেইকা টাকা নিয়ে ৪০০ টাকা দিয়া হৃদয় এই শার্ট কিনছিল। আনার পর বলছিল, তোমার টাকা দিয়া এই শার্ট কিনছি।’ ছেলের রক্তমাখা শার্টের দিকে তাকিয়ে মা অর্চনা রানী ফুঁপিয়ে উঠে কথাগুলো বলেছিলেন। অর্চনা রানির ছেলে হৃদয় চন্দ্র তরুয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন। স্বামী রতন চন্দ্র তরুয়া, মেয়ে মিতু রানিসহ প্রথম তারা ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন।

ক্যাম্পাসের সব জায়গায় যেন তাদের ছেলের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানকারই জাদুঘরে এসে দেখলেন ছেলের রক্তমাখা জামা, পরনের বেল্ট।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আমন্ত্রণে হৃদয় তরুয়া ও তার আরেক শহীদ সতীর্থ ফরহাদ হোসেনের মা-বাবা বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। উপলক্ষ ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা। বেলা তিনটায় শহীদ মিনারের সামনে হয় স্মরণসভা।

জুলাই আন্দোলনে প্ল্যাকার্ড হাতে হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে দুই শহীদ শিক্ষার্থীর মা-বাবা ও স্বজনেরা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কক্ষ ঘুরে দেখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমানের উদ্যোগে এটির উদ্বোধন হয়েছিল গত অক্টোবরে। এই কক্ষে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও মো. ফরহাদের ব্যবহৃত জিনিসসহ প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। পাশাপাশি আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শহীদ হৃদয় তরুয়ার রক্তমাখা শার্ট, প্যান্ট ও বেল্ট সংগ্রহ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর।

হৃদয়ের রক্তমাখা প্যান্ট, শার্ট দেখে কান্না আটকাতে পারেননি মা-বাবা কেউই।

ছেলের স্মৃতি তুলে ধরে মা অর্চনা বলেন, ১৮ জুলাই ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। মিছিলে যাওয়ার বিষয়টি হৃদয় তখন লুকিয়েছিল।

ছেলের স্মৃতিবিজড়িত ক্যাম্পাস দেখে স্তব্ধ ছিলেন শহীদ ফরহাদের বাবা গোলাম মোস্তফা। নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ফরহাদের মাথায় থাকা দেশের পতাকার দিকে। তবে তিনি কিছুই বলেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি এই কক্ষ সাজিয়েছেন। দুই শহীদ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্তমাখা কাপড়গুলো সংগ্রহ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ রাখতেই এই উদ্যোগ।

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র পরিবারের ছেলে হৃদয়। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হৃদয়। পরে ২৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কাছে হার মানেন।

ফরহাদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শহীদ ফরহাদ হোসেনও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন তিনি।

ফরহাদ হোসেন শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। বড় দুই বোন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। তাদের বাবা গোলাম মোস্তফা বেসরকারি একটি কোম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি করেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.