হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর ২০২২: বিজয়ী ৬ স্টার্টআপ
’হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর ২০২২’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে দেশের ছয়টি স্টার্টআপ। গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে হুয়াওয়ে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিযোগিতায় দুটি ক্যাটাগরির মধ্যে আইডিয়া স্টেজে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইনসিউরকাউ, দ্বিতীয় হয়েছে দুর্জয় ডিএসএস এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে রিল্যাক্সি। আর আর্লি স্টেজ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাহাজী লিমিটেড, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে পালকি এবং তৃতীয় হয়েছে উইগ্রো টেকনোলজিস লিমিটেড।
প্রতিটি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন স্টার্টআপ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৫ লাখ টাকা এবং ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট। অন্যদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীরা পাচ্ছে যথাক্রমে ৩ লাখ ও ১ লাখ টাকা পুরস্কার এবং ৮০ হাজার ডলার সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট। পাশাপাশি প্রতিটি স্টার্টআপের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা দেশের বাইরে সফল স্টার্টআপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং, হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের (বাংলাদেশ) প্রধান নির্বাহী প্যান জুনফেং, স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ, আইসিটি বিভাগের বিসিসির প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আলতাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ একাডেমির (আইডিয়া) সহযোগিতায় প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে হুয়াওয়ে।
যেভাবে বিজয়ী
এবারের আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিযোগিতার জন্য প্রায় ১৮০ অংশগ্রহণকারী আবেদন করেন। আইডিয়া স্টেজ ও আর্লি স্টেজ ক্যাটাগরিতে মোট ৬৮টি স্টার্টআপকে ইনকিউবেটর বুট ক্যাম্পে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়। বুট ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের স্টার্টআপ-সংক্রান্ত আইডিয়া (ধারণা) বিচারক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করেন। বিচারক প্যানেলের রায়ের ভিত্তিতে উভয় পর্যায় থেকে মোট ২০টি স্টার্টআপকে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য ফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়। শেষে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আইডিয়া স্টেজ থেকে তিনটি এবং আর্লি স্টেজ থেকে তিনটিসহ মোট ছয়টি স্টার্টআপকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বিজয়ীদের কথা
আইডিয়া স্টেজে চ্যাম্পিয়ন ইনসিউরকাউ হচ্ছে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও ইনসিউরেন্সভিত্তিক স্টার্টআপ। প্রযুক্তিনির্ভর এ উদ্যোগের মাধ্যমে গবাদি পশুর খাদ্য, চিকিৎসা ছাড়াও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেয় ইনসিউরকাউ। ইনসিউরকাউ উদ্যোগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসভির এ ফাহিম বলেন, গবাদি পশু আমাদের অন্যতম অর্থকরী প্রাণী। তবে যাঁরা পশু লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত, অধিকাংশই গবাদি পশুর পুষ্টিকর খাদ্য, চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন না। আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পশুর ইনসিউরেন্স সুবিধাসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটি কৃষক, এসএমই উদ্যোক্তা, এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে।
চতুর্থ প্রজন্মের রিটেইল প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ দুর্জয় ডিএসএস। দুর্জয় ডিএসএসের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফ হোসেন শচিন, জয়নাব খায়ের ও ইমাম আরণ্য। সম্প্রতি প্ল্যাটফর্মটি কিনসো ডিসকাউন্ট স্টোর নামে স্মার্ট গ্রোসারি স্টোর চালু করেছে, যেখানে থাকছে একটি সুপারশপের সব সুযোগ-সুবিধা, একই সঙ্গে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যাবে যে কোনো দোকানের থেকে কম মূল্যে। ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন রিটেইল উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দুর্জয় ডিএসএস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন মুদির দোকানে ট্যাব ও কিয়স্ক সেটআপ করে কোম্পানির বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাকে ডাটাভিত্তিক করার জন্য ‘সেলস ফোর্স অটোমেশন’। প্ল্যাটফর্মটি আইডিয়া স্টেজে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। এর আগে তারা আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রজেক্ট থেকে ১০ লাখ টাকা ফান্ড পেয়েছে।
আইডিয়া স্টেজে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ‘রিলাক্সি’ হচ্ছে নিজের যত্ন ও মানসিক স্বাস্থ্যনির্ভর সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মটিতে যে কেউ যে কোনো সময় নিঃসংকোচে নিজের আবেগ ও মানসিক সেবা শেয়ার করতে পারে। প্ল্যাটফর্মটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে বিশেষজ্ঞরা ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহ্নবী রহমান, নাইমুল হক জয় ও সামিউল ইসলাম স্বপ্নিল প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা। গত জুলাই মাসে গুগল প্লে স্টোরে জবষধীু – গবহঃধষ ঐবধষঃয ঝবষভপধৎব নামে প্ল্যাটফর্মটির অ্যাপ প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে অ্যাপটি প্রায় ৪ হাজারবার ডাউনলোড হয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ৭ হাজার জন অ্যাপে তাঁদের মনের কথা শেয়ার করছেন।
দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থা বদলে দিতে চায় জাহাজী প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্ম নৌপরিবহন ব্যবস্থার সব ধরনের লজিস্টিক কর্মকাণ্ডকে ডিজিটাইজড করে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মটি ইতোমধ্যে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্ল্যাটফর্মটির উদ্যোক্তারা হলেন- কাজল আব্দুল্লাহ ও অভিনন্দন জ্যোতদার।
দেশে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করছে ‘পালকি’। আর এই স্টার্টআপটিই আর্লি স্টেজে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। পালকি প্রতিষ্ঠাতা আল মোমিন বলেন, আমরা সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষকে গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দিতে চাই।
আর্লি স্টেজে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ‘উইগ্রো টেক’ কাজ করছে দেশের প্রান্তিক শ্রেণিকে নিয়ে। হাঁস-মুরগি, মৎস্য, গবাদি পশু চাষের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক এলাকার মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। আবার এই প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে করে বিনিয়োগকারী ও চাষি উভয়েই লাভবান হতে পারেন। আলভি রহমান ও মাহমুদুর রহমান প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তিনির্ভর এ উদ্যোগে ইতোমধ্যে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জের সহস্রাধিক কৃষক যুক্ত হয়েছেন।