হারলে ট্রাম্প জেলে যেতে পারেন
সর্বোচ্চ পদের জন্য নির্বাচনে লড়াই করে হেরে যাওয়ার বিপর্যয়কর ধাক্কা কোনো প্রার্থীই ভুলে যেতে পারেন না। কিন্তু মার্কিন ইলেক্টররা আগামী ৫ নভেম্বর যে রায় দেবেন, তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি হবে অনন্য উচ্চতার। তাঁর ভাগ্য প্রেসিডেন্ট পদ ও কারাবাসের হুমকির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থাৎ জিতলে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন; না জিতলে তাঁকে কারাগারে যেতে হতে পারে।
শনিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, যদি তিনি বিজয়ী হন, তাহলে ট্রাম্পই হবেন হোয়াইট হাউসে যাওয়া ও পারমাণবিক অস্ত্র কোডের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। যদি তিনি বিজয় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে ৭৮ বছরের ট্রাম্পকে আরও অপমানজনক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে; এমনকি কারাগারের পেছনেও সময় দিতে হবে। এটি হবে তাঁর মোহনীয় জীবনের সমাপ্তি, যে জীবনে তিনি সবসময় আইন ও জবাবদিহিতাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
মঙ্গলবার দিনটি কার্যত ট্রাম্পের জন্য রায়ের দিন।
ট্রাম্পের জীবনী লেখক গোয়েন্ডা ব্লেয়ার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) নিজেকে সেই লোক হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি এগুলো (আইন-জবাবদিহি) থেকে দূরে চলে গেছেন। তবে তিনি এবার অনেক হিসাব-নিকাশের মুহূর্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে; সম্পত্তি কমে যেতে পারে। যাই ঘটুক না কেন এবং তিনি জিতুন বা হারুন– তার স্বাস্থ্যের হিসাব থাকবে। মৃত্যু, অসুস্থতা, স্মৃতিভ্রংশ– এগুলো তিনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।’
প্রোপার্টি ডেভেলপার ও রিয়েলিটি টিভি তারকা ট্রাম্প তাঁর ক্যারিয়ারে নৈতিক ও আইনি পরিসীমাকে সীমানার দিকে ঠেলে দিয়ে অগণিত তদন্ত, আদালতের লড়াই ও মোটা অঙ্কের জরিমানা মোকাবিলা করে কাটাচ্ছেন। তাঁর জীবন উপন্যাসের উপজীব্য; পুরো জীবনে রয়েছে বিস্তর কলঙ্কও। ১৯৭০-এর দশকে সাদা ভবনগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গদের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিতে অস্বীকার করায় জাতিগত বৈষম্যের জন্য বিচার বিভাগ ট্রাম্প ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মামলা করে। তাঁর হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে। তাঁর ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি প্রোপার্টি প্রশিক্ষণ কোর্স প্রস্তাব করে ব্যবসা, জালিয়াতি, বিভ্রান্তিকর বিপণন ও গুণমান সম্পর্কে মিথ্যা দাবির জন্য একাধিক মামলার সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প ভুল স্বীকার না করে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করেন।
দাতব্য সংস্থা ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে দাতব্য তহবিল ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক খরচের জন্য ব্যবহারের অভিযোগে মামলা ও তদন্ত চলছে। অবশেষে ট্রাম্প দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অবশিষ্ট তহবিল দিয়ে ফাউন্ডেশনটি ভেঙে দিতে সম্মত হন। প্রতারণার মামলারও মুখোমুখি হয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কোম্পানিকে কৃত্রিমভাবে তার নেট মূল্যস্ফীত বাড়ানোর জন্য আদালত ৩৫০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করে। তাঁর বিরুদ্ধে কর জালিয়াতির অভিযোগও আছে।
এরই মধ্যে ট্রাম্প নিউইয়র্কের ট্যাবলয়েডগুলোর নিবন্ধে উঠে আসেন। তিনি নিজস্ব রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিসে’র উপস্থাপনা শুরু করেন। জীবনীকাল ব্লেয়ার বলেন, ট্রাম্পের প্রাথমিক উপলব্ধি ছিল– আপনি যদি বিখ্যাত হন, আপনি যদি বড় হন, তবে লোকেরা পথ থেকে সরে যাবে। তিনি জীবনের প্রথম অংশ একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার হিসেবে কাটিয়েছেন; নিজেকে বিশাল সাফল্যের মূর্ত প্রতীক বলে মনে করছেন যদিও। বাস্তবে তিনি যা যা করেছেন, তার অনেক কিছুই সফল হয়নি; তাঁর বাবা তাঁকে এগুলো থেকে বের করে এনেছিলেন।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবনও নানা বিতর্ক ও স্ক্যান্ডালে পূর্ণ। অভিযোগ আছে, তিন স্ত্রীর সঙ্গেই প্রতারণা করেছেন ট্রাম্প। দুই ডজনেরও বেশি নারী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। অতি সম্প্রতি সাবেক মডেল স্টেসি উইলিয়ামস গার্ডিয়ানকে বলেন, ট্রাম্প ১৯৯৩ সালে তাঁকে স্পর্শ করেছিলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগেরও অভিযোগ আছে।