হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত, গ্রেপ্তার ১

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় আব্দুল হান্নান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে পল্টন থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওসমান হাদিকে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর ৫৪-৬৩৭৫ বলেও জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃত হান্নানের বাবার নাম মো. আবুল কাশেম। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। র‌্যাব আরও জানায়, হামলার ঘটনায় হান্নান সরাসরি জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এদেক শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয় এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছেন তিনি। মেডিকেল বোর্ড জানায়, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফুসফুসে ইনজুরি বিদ্যমান। তবে তার কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে ফিরে এসেছে।

 

বিবৃতিতে মেডিকেল আরও জানায়, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু সার্জিক্যাল হস্তক্ষেপ সম্পন্ন হয়েছে, তাই বর্তমানে তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সব সাপোর্ট চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে।

বিবৃতিতে মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. রোগীর মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু সার্জিক্যাল হস্তক্ষেপ সম্পন্ন হয়েছে, তাই বর্তমানে তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সব সাপোর্ট চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে।

২. ফুসফুসে ইনজুরি বিদ্যমান রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব দিয়ে অল্প পরিমাণ রক্ত নির্গত হওয়ায় তা আপাতত চালু রাখা হয়েছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস (ARDS) প্রতিরোধের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে।

৩. কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে ফিরে এসেছে। এটি বজায় রাখার জন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লুইড ব্যালেন্স যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে।

৪. পূর্বে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা (DIC) দেখা দিলেও বর্তমানে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ অবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও রক্তজাত উপাদান সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে।

৫. ব্রেন স্টেম ইনজুরির কারণে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তা চলমান থাকবে। হৃৎস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে টেম্পোরারি পেসমেকার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট টিম সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

৬. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, রেডিওলজি, আইসিইউ, অ্যানেস্থেশিয়া, নিউরোসার্জারি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও সাপোর্টিভ স্টাফদের অসাধারণ ও মানবিক অবদানের জন্য এই মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।

৭. বর্তমানে রোগীর সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

৮. এই মেডিকেল সামারি রোগীর ভাই ও নিকটাত্মীয়দের বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। তারা চাইলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারেন। মেডিকেল টিমের পক্ষ থেকে সবার প্রিয় শরিফ মো. ওসমান হাদীর জন্য বিনীতভাবে দোয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

৯. অপ্রয়োজনে কেউ হাসপাতালে এসে ভিড় করবেন না। কোনও ধরনের ভিজিটর অনুমোদিত নয়।

১০. কোনও ধরনের অনুমানভিত্তিক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হলো।

১১. আমাদের মেডিকেল টিম সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। রোগীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য মেডিকেল বোর্ড ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।

 

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রিকশায় করে ফিরছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদি। রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় পেছন থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল থেকে খুব কাছ থেকে তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। গুলি মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর মোটরসাইকেলটি দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.