সেই রনির ৬ দফার ব্যাখ্যা দিল রেলওয়ে
বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির দেওয়া ছয় দফাসহ স্মারকলিপির ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড টিকেটিং ১৯৯৪ সাল হতে চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৭টি স্টেশনে স্ট্যান্ড এলোন সিস্টেমে টিকেটিং চালু হলেও সময়ের পরিক্রমায় ও ডিজিটাল পদ্ধতির আধুনিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে সর্বাধুনিক টেকনোলজিক্যাল কৌশলের মাধ্যমে ৮৩টি স্টেশনে টিকেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সহজ লিমিটেড জেভি বর্তমানে রেলওয়ের টিকেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট ইস্যু করা হচ্ছে। যদি রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমের উন্নয়নে সুস্পষ্ট অভিমত, মতামত বা সুপারিশ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া রেলওয়ে পুলিশ কর্তৃক স্টেশন এলাকায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে নানাবিধ উদ্যোগ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কারো যেকোনো সুপরামর্শ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমে বা প্রক্রিয়ায় অনলাইন কোটার টিকিট ব্লক করার বা টিকিট বুকিং করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া অনলাইন বা কাউন্টার (অফলাইন) টিকেটিংয়ের বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার রাখা রয়েছে। টিকিট প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যেকোনো নাগরিক রেলওয়ের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে টিকিট ক্রয় করতে পারে। রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমে টিকিট বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই।
যাত্রী চাহিদার প্রেক্ষিতে ট্রেনের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করত ২১৮টি। যার মধ্যে আন্ত নগর ট্রেন ছিল ৬৪টি, আন্তর্দেশীয় ট্রেন দুটি এবং লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত ১৫২টি। বর্তমানে ২০২২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৬৬টি। যার মধ্যে আন্ত নগর ট্রেন ১০৪টি, আন্তর্দেশীয় আটটি এবং লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা ২৫৪টি। অর্থাৎ বিগত ১৩ বছরে যাত্রীবাহী ট্রেন বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৪৮টি। যার মধ্যে আন্ত নগর ট্রেন বৃদ্ধির সংখ্যা ৪০টি, আন্তর্দেশীয় ট্রেন ছয়টি ও লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন ১০২টি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির নানা প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার ফলে শিগগিরই আরো ১৬টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়েতে দীর্ঘদিন নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সম্প্রতি নিয়োগ কার্যকম শুরু হয়েছে। লোকবল স্বল্পতার কারণে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীসেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটে। তবে রেলওয়েতে বর্তমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী টিটিই পদমঞ্জুরি ৩৬৯টি, কর্মরত ১২২ জন, শূন্য ২৪৭টি পদ। টিসি পদমঞ্জুরি ৩৬৩টি, কর্মরত ১১৬ জন এবং শূন্য ২৪৭টি পদ। অর্থাৎ টিকিট চেকিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত অধিকাংশ পদ খালি থাকায় চেকিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে বর্তমানে চলমান নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ট্রেনে মনিটরিং কার্যক্রম আরো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
এ ছাড়া ট্রেনে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে বিভিন্ন ট্রেনে ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। রেলওয়েতে বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে কমে খাবারের দাম নির্ধারিত রয়েছে। আন্ত নগর ট্রেনের প্রতিটি কোচে খাবারের মূল্যতালিকা টানানো থাকে এবং রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর উল্লেখ থাকে। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে অথবা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনাকালীন খাবারের মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করা হলে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বড় স্টেশনে বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একজন যাত্রী বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি পান ও সংগ্রহ করতে পারেন। রেলওয়ের স্যানিটেশন ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০টি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম উচ্চতা বৃদ্ধি, ফেন্সিং নির্মাণসহ স্যানিটেশন আধুনিকায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।