সুপ্রিমকোর্ট খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত, এই প্রথম ফুলকোর্টের ডিজিটাল সভা!
কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেই স্বল্প পরিসরে আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত একদিনের ব্যবধানে আজ স্থগিত করা হয়েছে। অবশ্য আজ শনিবার অপর আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিচারপতিদের অংশগ্রহণে আগামী ২৬ এপ্রিল সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ইতিহাসে এই প্রথম ফুলকোর্টের ডিজিটাল সভা বসছে কাল।
আশা করা হচ্ছে, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কি উপায়ে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা করতেই ভিডিও কনফারেন্স ডাকা হয়েছে।
আদালত পরিচালনার উপায় নিয়ে গত কয়েকদিনে আইনজীবীদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে ফেসবুকে মতামত দিতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৩ এপ্রিল একটি দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে তথ্য দেওয়া হয় যে, সার্কভুক্ত আটটি ও আসিয়ানের ১০টিসহ বিশ্বের মোট ৩০টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর করোনার প্রভাব কী, তা বুঝতে ২১ ও ২২ এপ্রিল এই দুই দিন ওই দেশগুলোর সর্বোচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিট করে দেখা যায় যে বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রম, তারই সর্বোচ্চ আদালতের দুয়ার বন্ধ রয়েছে।
ওই সমীক্ষাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুর মিছিলে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স ও স্পেন রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এর আগে গত ১১ এপ্রিল সীমিতভাবেও আদালত পরিচালনা সমিচীন হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে গত ২৩ এপ্রিল আগের সিদ্ধান্ত বদল করে সীমিতভাবে আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে শনিবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এছাড়া অধস্তন আদালতের বিষয়ে আজ জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে জেলা জজ ও দায়রা জজ/ মহানগর দায়রা জজ এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত /চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম সপ্তাহে দুইদিন পরিচালনা সংক্রান্ত আদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিসহ সাধারণ বিজ্ঞ আইনজীবীগন বর্ণিত আদেশ পুনর্বিবেচনা করতঃ আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। এরপর এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সাথে আলোচনা করেছেন।
এমতাবস্থায়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক গত ২৩ এপ্রিল তারিখে বর্ণিত জেলা জজ ও দায়রা জজ/ মহানগর দায়রা জজ এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত /চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম সপ্তাহে দুইদিন পরিচালনা সংক্রান্ত আদেশর কার্যকারিতা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল: ‘‘দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা এবং বিস্তাররোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত দেশের সকল আদালতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়সমূহ শুনানির নিমিত্ত ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো: নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।
আর ছুটিকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সকল অধিক্ষেত্রের অতীব জরুরি বিষয় সমূহ শুনানির নিমিত্ত হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
আর আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুন বিষয়ে বিচারপতি মহোদয়গণ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’’
এছাড়া দেশের অধস্তন আদালতগুলোর বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল: ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে এবং মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজকে ছুটিকালীন সময়ে তার সুবিধা মতো প্রতি সপ্তাহে যেকোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। আর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ছুটিকালীন সময়ে তার বা তাদের সুবিধামতো প্রতি সপ্তাহের যে কোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির (কারাগারে থাকা হাজতে আসামির আবেদনসহ) নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’’