সুপার ফুড ‘কিনোয়া’র চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ে!
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসল ‘কিনোয়া’। দানাদার জাতীয় এই রবি শস্যটিকে বলা হয় সুপার ফুড। দক্ষিণ আমেরিকার এই ফসলটির চাহিদা বিশ্বজুড়ে। নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যাওয়া এই ফসলটি ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের জন্য উপকারি খাবার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঔষধি গুণসম্পন্ন কিনোয়ার চাষ শুরু হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। আমিনুর রহমান আমিন নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ১২ বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তিনি স্বপ্ন দেখছেন বাণিজ্যিক সফলতার। দেশে এই ফসলটির তেমন পরিচিতি না থাকায় বাজারজাত নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
চাষি আমিনুর রহমান আমিনের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের চারোখুড়া গ্রামে। তিনি মৃত রফিজ উদ্দীনের ছেলে। ইউটিউবে দেখে কিনোয়া চাষে শুরু করেন তিনি। গত বছর এক বিঘা জমিতে কিনোয়ার আবাদ করলেও এবার পরিধি বাড়িয়ে করেছেন ১২ বিঘায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিনোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি আমিনুর রহমান আমিন। বর্তমানে তার জমিতে পাঁকতে শুরু করেছে কিনোয়া। জমি থেকে ফসলটি কাটাই মাড়াইয়ে কাজ করতে দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিককে। তারা অধিক পরিপক্ক কিনোয়া কেটে মাড়াইয়ের জন্য স্তূপ করে রাখছিলেন পাশের ফাঁকা জায়গায়।
স্বল্প মেয়াদি এই ফসলটি কম খরচে অধিক লাভজনক। উৎপাদন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ মণ কিনোয়া পাওয়া যায়। বিভিন্ন সুপারশপসহ অনলাইনে মানভেদে এই খাবারটি প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতিবিঘা জমিতে লাখ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়।
জানা গেছে, সুপার ফুড কিনোয়া বাংলাদেশে অপ্রচলিত ও নতুন খাবার হলেও এর চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে। সুপারফুড খ্যাত এই রবি শস্যটিতে রয়েছে হাইপ্রোটিন, মিনারেল, আয়রন, এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, লো গ্লাইসিমিকস ইনডেস্কসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। এর কদর রয়েছে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ দামি খাবারের দোকানে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় খাবারটি। তাই বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।
কৃষক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কৃষি কাজ মনোনিবেশ করি। ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে কিনোয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হই। প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে এই ফসলের আবাদ করে সাফল্য পাই। তাই এবার পরিধি বাড়িয়ে ১২ বিঘা করেছি। এবছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো পেলে আগামী বছর চাষের পরিধি আরও বাড়াবো।
তিনি আরও বলেন, কিনোয়া অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফসল। এতে ভিটামিন-সি ব্যাতীত সব ধরণের ভিটামিন বিদ্যমান। কিনোয়ার চাষ পদ্ধতিও সহজ। খরচ একেবারেই কম। বিঘা প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে, ফসলটি বাজারজাত একটু কঠিন। লোকাল মার্কেটে একদম অপরিচিত একটি ফসল এটি। তবে, অনলাইনে এর ব্যাপক চাহিদা আছে।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, কিনোয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফসল। এটিকে সুপার ফুড বলা হয়, অনেকে এটিকে নভোচারীদের খাবার বলেন। কিনোয়া অনেক উপকারি খাবার। এটি আমাদের সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে কিনোয়ার চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। মাঠ পর্যায়ে চাষিদের এই ফসলটি চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেওয়া হবে।