সীমান্তের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশিদের মারধর, বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পাঁচ কৃষককে মারধর করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। শুক্রবার দুপুরে সীমান্তের ৯৩০নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৮নং সাবপিলারের পাশে প্রায় পাঁচশ গজ ভেতরে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষ্ণানন্দবকসী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে বিএসএফ সদস্যরা দৌড়ে ওপারে চলে যান।

বিএসএফের হামলায় আহত পাঁচ কৃষক হলেন কৃষ্ণানন্দবকসী গ্রামের ইসরাইলের ছেলে সামছুল হক (৫৫), খোকা মাহমুদের ছেলে জাবেদ আলী (৬০), মোন্নাফ হোসেনের ছেলে কাশেম আলী (৪৮), মুকুল ইসলামের ছেলে রিপন মিয়া (৩৫) ও কাশেম আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৮)।

প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল, নুরুল ইসলাম, হামিদুল, কলেজছাত্র মিতুনসহ আহত তাজুল ইসলাম ও সামছুল হক জানান, দুপুরে ১০-১২ জন কৃষক সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি তাদের ভুট্টা, মরিচ ও আলুখেতে কাজ করছিলেন। এ সময় ভারতের নারায়ণগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পের ৮-১০ জন বিএসএফ সদস্য সীমান্তের হরিদাস খামার গ্রামের কাঁটাতারের ৩নং গেট খুলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। বিএসএফ শূন্যরেখা অতিক্রম করায় কৃষকরা তাদের নিষেধ করেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা কৃষকদের অকথ্য গালাগাল করতে করতে তাদের ওপর চড়াও হন এবং লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন। প্রাণভয়ে কৃষকরা গ্রামের দিকে দৌড় দিলে বিএসএফ সদস্যরা তাদের পিছু নিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়েন। পরে গ্রামবাসী একজোট হয়ে বিএসএফ সদস্যদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান।

এদিকে সীমান্তের ওপারে দুটি পিকআপে আরও ৫০-৬০ জন বিএসএফ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী লাটিসোঁটা নিয়ে সীমান্তে জড়ো হতে থাকেন।

খবর পেয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের গোরক মণ্ডল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার দেলবর হোসেনসহ বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে শূন্যলাইন থেকে সরিয়ে দেন।

পতাকা বৈঠকে বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ : পাঁচ কৃষককে পেটানোর ঘটনায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিজিবি এবং বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার গোরকমন্ডল সীমান্তের ৯২৯ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৪ নম্বর সাবপিলারের পাশে অনুষ্ঠিত প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশি কৃষকদের মারধরের কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। বিএসএফের পক্ষ থেকে অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে তারা প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন এবং তদন্ত করে অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান।

বিজিবি সূত্র জানায়, বৈঠকে বিজিবির পক্ষে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাকিল আলম এবং বিএসএফের পক্ষে ভারতীয় ৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার অমিত কুমার নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে বিজিবি ও বিএসএফের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.