সাতক্ষীরায় ২১ ইউপিতে ভোট আগামীকাল
আগামীকাল সোমবার সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়ার ২১ ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন। আর ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পাড়া মহল্লায়। তবে অনেকেই বলছেন ইউপি নির্বাচন উৎসবের আমেজ ছড়ালেও ভোট গ্রহণের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
দুই উপজেলার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করে (নৌকা প্রতিক) বরাদ্ধ দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠ দখলে রেখেছে। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন রূপ নিতে পারে সংঘর্ষের দিকে। নির্বাচন কমিশন থেকে ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান এই ঘোষণার সাথে সাথে মিছিল মিটিং ও গণসংযোগ শুরু করে প্রার্থীরা। এসময় আধিপত্য বিস্তর ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দলীয় প্রার্থীর নেতা কর্মীদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের হামালা পাল্টা হামলা নির্বাচনী কার্যালয়সহ প্রচার মাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
তালা ও কলারোয়া নির্বাচনি বিবাদে জড়িয়ে ইতি মধ্যে একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রার্থীদের অনেকেই কারা ভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন। প্রতিদিনই তালা কলারোয়ায় নির্বাচনি সহিংসাতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মূলত পছন্দের প্রার্থীর জয়ের ব্যপারে বেশী আশাবাদি কর্মী সমর্থকরা মাঠ দখলে রাখতে বিবাদে জড়াচ্ছে। আবার পারজয়ের ভয়ে ভোটাদের চাপে রাখতে কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে সহিংসতা করছে।
এদিকে নির্বাচনের শান্তি পূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাওয়া খাওয়া ফেলে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রত্যান্ত এলাকার প্রতিটি গ্রাম। হানাহানি ছাড়াই ভোট উৎসব শেষ করতে যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটা সদস্যের। দুই উপজেলার বিট পুলিশের কর্মকর্তারা প্রত্যেক প্রার্থীদের উপর সকর্ত নজরদারিসহ আইন ভঙ্গকরা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুশিয়ারী বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের কাছে।
এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তার কর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করার পর এখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে হুমকি প্রদর্শন করে নৌকায় ভোট দিতে বলছে। নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্যও ভয় ভীতি দেখাচ্ছে।
এলাকার সাধারণ ভোটার বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি ঘরোনার ভোটাররা জানান, ইউপি নির্বাচন নিয়ে তারা আতঙ্কিত। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়ে থাকায় কে কাকে ভোট দিবে তা ঠাহর করতে পারছে না। ভোটের পরিবেশ ভয় ডরহীন না হলে তারা শেষ মেশ ভোট কেন্দ্রেই যাবেন না। সাতে পাঁচে নেই এমন সব খেটে খাওয়া সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে কি যাবে না তানিয়ে দো’টানায় ভূগছে।
কলারোয়ায় গড় হিসাবে একজন দলীয় প্রার্থীর (নৌকা প্রতীক) বিপক্ষে প্রায় ৪ জন স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করছেন। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার প্রচারণা। আজ রাত পোহালেই কাল তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২৪ টির মধ্যে ২১ টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচন। এর মধ্যে কলারোয়া ২ টি ও তালায় ৩ টি ইউনিয়নে প্রথম বারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, উপজেলার (১০ইউপিতে) কয়লা, হেলাতলা, যুগিখালী, জয়নগর, জালালাবাদ, লাঙ্গলঝাড়া, কেঁড়াগাছি, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর ও দেয়াড়া ইউনিয়নে হবে ইউপি নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৮৫ জন, এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য ১২৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। ২০শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ৯১টি কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৭০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১৭৭৪ টি এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৭২৬৯৬ টি।
তিনি আরো বলেন কোন প্রার্থী নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলার ধানদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, তেঁতুলিয়া, ইসলামকাটি, খলিষখালি, তালা সদর, খলিলনগর, মাগুরা, খেশরা ও জালালপুর ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ১১ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন প্রার্থী মাঠে আছেন। যার গড় হিসাবে প্রতি ইউনিয়নে আ.লীগর দলীয় প্রাথীর্র (নৌকা প্রতীক) বিপক্ষে ৩ জন করে প্রার্থী জয়ের জন্য লড়াই করছেন।
এলাকার ভোটারা জানান, নির্বাচন ঘিরে তালায় প্রার্থীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নৌকার একজন প্রর্থীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী। দলীয় এসব বিদ্রোহীদের দমন করা না গেলে ফলাফলের হিসেব গরমিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল কবীর জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করা হবে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যত্যয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তালা ও কলারোয়া নির্বাচন ঘিরে সাহিংসতা রোধে পোশাক ধারি পুলিশের পাশা পাশি সাদা পোশাকেও পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের পূর্বের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠানের কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কিন্তু কোভিড-১৯(করোনা ভাইরাস) প্রাদুর্ভাবের কারণে ভোট স্থগিত করা হয়। পরে ভোটের তারিখ পুনর্নিধারণ করে ২১ জুন করা হয়। সেই নির্ধারিত সময়রে মধ্যে কভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সারা দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পূর্বের সেই স্থগিত নির্বাচন আগামীকাল ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।