সাইবার অপরাধীরা ভয়ঙ্কর, সাবধান!

ভয়ডরহীন! যেমন ইচ্ছে স্বাধীন সাইবার অপরাধীরা। কখনও জীবননাশের হুমকি। কখনও হ্যাকিংয়ের অভিনব পথ। সুযোগ পেলেই ব্যক্তিগত তথ্য জিম্মি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা। খোলামেলা ভাবে ব্যাংকিং চ্যানেল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও যেন দেখার কেউ নেই। অন-লাইন প্রতারণার ফাঁদে সব হারানো মানুষের সংখ্যা এ দেশে কম নয়। তাই লোভের ফাঁদে পা না দেওয়ার পরামর্শ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। । তবে এ সব অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৯ জন।

খুদে বার্তা দেখেই ছানাবড়া চোখ। চিন্তার ভাজ কপালে, কি করবেন? টাকা না দিলে একমাত্র ছেলেকে তুলে নিয়ে যাবে অপরাধীরা। ছাড় নেই পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। দরকার ২০ লাখ। অবশেষে খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেলো ফেক ফেসবুক আইডি দিয়ে এসেছে হুমকি। ফোন নম্বর ও ছবি ব্যবহারকারী ব্যক্তি জানেই না কিছু। তাহলে হুমকি কে দিয়েছে?

এবার আসা যাক ফেসবুক হ্যাকিংয়ের ঘটনায়। গর্ভকালীন জটিলতা নিয়ে স্বামীর মেসেঞ্জারের পাঠানো ব্যক্তিগত ছবি ফোনে পাঠিয়ে হুমকি। টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই ছবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রুসান। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। পরিবার সমাজের ভয়ে যাওয়া হয়নি আইনের দোরগোড়ায়।

এবার নতুন গল্প। পরিবারের নতুন অতিথি আসার খবরে বাড়তি আয়ের চাপ বাবার ঘাড়ে। তাই অনলাইনে আয়ের প্রলোভনে পা দিয়েছিলেন তিনি। খুইয়েছেন ১৪ লাখের বেশি টাকা।

একই প্রলোভনের ফাঁদে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। কিভাবে প্রতারণা করে সাইবার অপরাধীরা। সে হিসেব কষে দেখালেন কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘ফিশিং অ্যাটাকের বিষয়টি মানুষ আগে ধরতে পারতো। এখন অ্যাটাকটায় অ্যাডভান্সমেন্ট হয়ে গেছে। যেমন ওটিপি বাইপাসের বিষয় আছে। এরপর ম্যাস মেইলে আক্রমণের যে কথা বললাম এটা একটু অ্যাডভান্সড টেকনিক।’

কোন ফাঁক ফোঁকরে অপরাধীদের বাস। সে হিসেব আগেই কষেছেন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের আইসিটি খাত নিয়ন্ত্রণ করছে ৫ আগস্টের পর এরা অনেকেই এখন নাই। অথবা অনেকেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। যে কারণে আমাদের যে পুরো আইসিটি অবকাঠামো এটাতে ধাক্কা লেগেছে।’

দেশি-বিদেশি চক্রের কাছে অসহায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দক্ষতার অভাবে এখনও সুরাহা হচ্ছে না অধিকাংশ মামলা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর জোহা বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ হাজারের ওপর প্রতারণা সংক্রান্ত অভিযোগ বা লক্ষাধিক জিডি থাকলেও আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং তদন্ত যদি না হয় তাহলে কোনো অবস্থাতে কোনো প্রক্রিয়ায় কোনো নীতিমালা বা আইন জাতীয় প্রতারণাকে ঠেকাতে পারবে না।’

ঢাকায় এখন পর্যন্ত সাইবার অপরাধে ১ হাজার ৪৮৮টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৮৮টি।

ডিএমপি মিডিয়া উইংয়ের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘যখন টাকাটা খোয়া যায় তখন পুলিশের কাছে আসে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যে অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন কর হয় সেটি পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন জড়িতদের খুঁজে বের করা অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়।’

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.