সাইফ আলীর ১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি বেহাতের শঙ্কা

সময়টা ভালো যাচ্ছে না হিন্দি সিনেমার অভিনেতা সাইফ আলী খানের। চোরের ছুরিতে আহত হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই হাজির নতুন শঙ্কা। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার মুখে; যার মূল্য অন্তত ১৫ হাজার কোটি রুপি।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাইফের সেই সম্পত্তি সরকার আগেই শত্রু সম্পত্তি বলে ঘোষণা করেছিল। তা নিয়ে মামলা চলছিল আদালতে। সিদ্ধান্ত রূপায়ণের বিরুদ্ধে আদালত স্থগিতাদেশও দিয়েছিল। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে। ফলে বেড়ে গেছে সম্পত্তি অধিগ্রহণের শঙ্কা।

সাইফ আলী ও তার পরিবার ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের বংশধর। হামিদুল্লাহ ১৯২৬ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ভোপালের শাসক ছিলেন। ১৯৪৯ সালে চুক্তির মাধ্যমে তিনি ভোপালকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেন।

১৯৫৫ সালের রাজস্ব নথি অনুযায়ী, সরকার ৫ হাজার ৭৯৬ একর জমি নবাবের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তার মধ্যে রয়েছে ৮৩০ একর ফেরদৌস ফার্মস, ৩ হাজার ৮৭ একরের চিকলোড রিট্রিট, ৩৬ একরের রিজওয়ান ফার্মস, শুটিং রেঞ্জ।

হামিদুল্লাহ খানের তিন কন্যা। আবিদা সুলতান, সাজিদা সুলতান ও রাবিয়া সুলতান। বড় মেয়ে আবিদা ১৯৫০ সালে বিয়ে করে পাকিস্তান চলে যান। তখন নবাবের উত্তরাধিকারীর স্বীকৃতি দেওয়া হয় মেজ কন্যা সাজিদাকে। সাজিদা বিয়ে করেছিলেন হরিয়ানার পতৌদির নবাব ইফতিখার আলী খান পতৌদিকে।

ইফতিখারের ছেলে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদি। মনসুর ও শর্মিলা ঠাকুরের সন্তান সাইফ। অর্থাৎ সাইফ হলেন হামিদুল্লাহ খানের প্রপৌত্র।

সাজিদা সুলতানের মৃত্যু হয় ১৯৯৫ সালে। তার সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয় ছেলে মনসুর আলী খান ও দুই মেয়ে সালেহা ও সাবিয়া সুলতানের মধ্যে। মনসুর আলী খানের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন ছেলে সাইফ ও দুই মেয়ে সোহা ও সাবা আলী খান।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সাইফের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ভোপালের নুর উস সাবাহ প্যালেস, ভোপালের ৫ হাজার ৭৯৬ একর ও ভোপালের বাইরে ১ হাজার ৩৭০ একর জমি এবং ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস। এই বাড়িতেই সাইফের জন্ম।

চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয় ১৯৬২ সালে, পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬৫ সালে। ওই দুই যুদ্ধের পর ১৯৬৮ সালে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ প্রণয়ন করা হয়। আইন অনুযায়ী, যারা পাকাপাকিভাবে পাকিস্তান ও চীনে চলে গেছেন, ভারতে থাকা তাদের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হবে। রাষ্ট্র হবে তার মালিক।

২০১৪ সালে ভোপালের খান পরিবারের সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলে ঘোষণা করা হয়, যেহেতু আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ভারত সরকার শত্রু সম্পত্তি আইনে সংশোধন আনে। তাতে বলা হয়, উত্তরাধিকারীদেরও শত্রু সম্পত্তিতে কোনো অধিকার থাকবে না।

২০১৫ সালে সাইফ এ নিয়ে মধ্য প্রদেশের হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। তার দাবি, চুক্তির শর্ত ভেঙে ওই সম্পত্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার দাবি, ১৯৬২ সালেই সরকারি সনদে সাজিদাকে নবাব হামিদুল্লাহর একমাত্র উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সরকারি সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। ট্রাইবুনালে আবেদনের জন্য সাইফকে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে এই বছরের ৮ জানুয়ারি সাইফ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যুগ্ম সচিবের কাছে এক আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, আইনি লড়াই ও কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এই বিপুল সম্পত্তির ভাগ্য।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.