সরকারে বসে গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে দল গঠন করলে তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপর আছে, সেই আস্থা আপনাদের ওপর আর থাকবে না।
গত মাসে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। তখন আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আজকে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘কেন বলেছিলাম, তা এখন প্রমাণিত হচ্ছে।’
সরকারের এক উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘তখন তিনি বলেছিলেন আমি নাকি এক–এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক–এগারোর ভুক্তভোগী। এক–এগারো যারা তৈরি করেছে তারা টিকতে পারেনি মানুষের কাছে। আবারও হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই যদি আবার কেউ সেই এক–এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে সেই একদলীয় শাসন ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান, তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।’
নতুন যেকোনো রাজনৈতিক দলকে বিএনপি স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্রসংগঠন ইতিমধ্যে করেছেন, আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখনই দল তৈরি করবেন, স্বাগত জানাব। তার অর্থ এই নয় যে আপনারা সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ–সুবিধা নিয়ে আপনারা আপনাদের দল গঠন করবেন। সেটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’
দেশ একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক শাসনে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে আছে বলে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গোটা দেশের মানুষ এখন সেটাই চায়, তারা যাতে অতি দ্রুত একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সাত মাসে সেই জায়গায় যেতে পারিনি। আমরা দেখছি, নতুন সরকার অন্তর্বর্তী সরকার আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছি, তারা চেষ্টা করছেন অতি দ্রুত কিছু কাজ শেষ করে এই নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এরই মধ্যে কতগুলো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে।’
সেই সন্দেহটা হচ্ছে যে আদৌ নির্বাচন নিয়ে এরা আন্তরিক কি না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কারণ আছে এই সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার। তার মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তারা অংশ নিতে পারবে।’
এ সময় ছাত্রদল আয়োজিত সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন বিএনপির মহাসচিব প্রশ্ন করেন, এটা কি আপনারা মেনে নেবেন? জবাব আসে—না, না, না।
তখন বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটাই প্রমাণিত হয়েছে, তারা এখন তাদের নিজেদের স্বার্থে ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। এই কথাটা কালকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন। হুইচ ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কি আমরা এটা মনে করব, তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন? সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না। এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।’
শুধু ৩৬ দিনে ফ্যাসিস্টরা হটে যায়নি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরের আন্দোলনে ত্যাগে–রক্তে ফ্যাসিস্টদের হটতে হয়েছে। অবশ্য এই ৩৬ দিন ছিল চূড়ান্ত, যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে।
সেখানেও সংগঠনের ছেলেরা ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা হিসাব দেখেছি, সেই হিসাবে প্রায় দুই হাজার ছেলে শহীদ হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় আট শ ছেলে আমাদের ছাত্রদলের। ঠাকুরগাঁও জেলায় যে নয়জন শহীদ হয়েছে, তার মধ্যে সাতজন ছাত্রদলের। ছাত্রদলের কোনো ভূমিকা ছিল না, বিএনপির কোনো ভূমিকা ছিল না—এ কথা যারা বলেন, মনে হয় তাদের সঠিকভাবে উপলব্ধি করা দরকার। তথ্যগুলো নেওয়া দরকার।’
আলোচনা সভায় ঢাকার চার মহানগরে ছাত্রদলের সদস্য ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও সদস্যসচিব মোস্তফা জামান।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রদলের ইমেজ (ভাবমূর্তি) নষ্ট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কুয়েটে কে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাকে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদল ‘গুপ্ত’ রাজনীতির অবসান চায়। এই রাজনীতি আর চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী নামধারী ‘গুপ্ত’ সংগঠনের এক নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।