সমালোচনার মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন টিউলিপ সিদ্দিক

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (১৪) জানুয়ারি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার ও সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন। পরে নিজেই তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে পদত্যাগের খবর জানান।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গত কয়েক দিন যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে পতদ্যাগের জোর দাবি উঠে।

টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করায় একই সঙ্গে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বেও ছিলেন। ফলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়লে তিনি। ফলে সম্প্রতি টিউলিপ নিজেই তার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘মন্ত্রিত্বের মানবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা’ ল্যারি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেন। এরপর তদন্ত শুরুও করেন ম্যাগনাস। অবশেষে এই তদন্ত চলার মধ্যেই পদত্যাগ করলেন টিউলিপ। পদত্যাগপত্রে টিউলিপ উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। পদত্যাপত্র গ্রহণ কর একই কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে ৯টি বড় প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি। এই বিপুল পরিমাণ অর্থআত্মসাতের অভিযোগ শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও আসে। বাংলাদেশে এই অভিযোগ তদন্তের ঘোষণা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এই তৎপরতার খবর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

এর পরপরই টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট কয়েক ব্যক্তির ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া নিয় প্রশ্ন উঠে। এছাড়া ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলোতে টিউলিপের ওই বৈঠকের ছবি ফলাও করে প্রচার হয়। কারণ এর সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্র্নীতির অভিযোগের সম্পৃক্ততা খোঁজা হয় প্রতিবেদনগুলোতে।

ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে টিউলিপ সিদ্দিককে দুই কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। এই ফ্ল্যাট তাকে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি। এ ছাড়া বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে টিউলিপ সিদ্দিক নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক গত বছর লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর গত জুলাইয়ে তাঁকে ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেয় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকার।

গত বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এতদিন কেন পতদ্যাগ করেননি টিউলিপ : টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে একের পর অভিযোগ ওঠার পরও টিউলিপকে কেন বরখাস্ত করা হয়নি বা তিনি কেন পদত্যাগ করেননি, এ নিয়ে ব্রিটেনের গণমাধ্যমে নানা বিশ্লেষণ চলতে থাকে। এর একটি ব্যাখ্যা হলো প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা। টিউলিপ লেবার পার্টির নরম বাম বা মধ্যপন্থি অংশের নেতা। টিউলিপ ২০১৫ সালে জেরেমি করবিনকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করার জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর বাইরেও টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের লেবার পার্টির রাজনীতিতে ক্ষমতাধর একজন ব্যক্তি। হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেটের এমপি হিসেবে তিনি কেয়ার স্টারমারের প্রতিবেশী। লেবার পার্টি যখন নতুন নেতৃত্ব বাছাই করছিল, তখন শুরুতে স্টারমারকে সমর্থন দেন টিউলিপ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.