সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপ টিকিটের দাম কমাল ফিফা
২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি ও ড্র চূড়ান্ত হওয়ার পর ফুটবলভক্তদের পুরো মনোযোগ এখন টিকিট সংগ্রহের দিকে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে যে দামে টিকিট বিক্রির কথা জানিয়েছিল ফিফা, তা থেকে অবস্থান পাল্টে ফেলেছে তারা। টিকিটের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউরোপের ফুটবলভক্তরা। তাদের তীব্র সমালোচনার মুখে টিকিটমূল্য কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।
গত সপ্তাহে জার্মান সকার ফেডারেশন বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে বিভিন্ন ক্যাটাগরির টিকিটমূল্য প্রকাশ করে। যেখানে সর্বনিম্ন ১৮০ ডলার (প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে ৭০০ ডলার (৮৫ হাজার ৩৮৪ টাকা) পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে দাম। এ ছাড়া ফাইনাল ম্যাচের টিকিট সর্বনিম্ন ৪১৮৫ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা) এবং সর্বোচ্চ ৮৬৮০ ডলার (১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা)। তীব্র বিরোধীতার পর ফিফা বলছে, ফাইনালসহ প্রতিটি ম্যাচে নির্ধারিত সংখ্যায় ৬০ ডলার দামের টিকিট পাওয়া যাবে।
সংবাদ সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বকাপ কৌশল নিয়ে সমালোচনার মুখে ডলারের উচ্চমূল্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্যতা সত্ত্বেও নিজের অবস্থান বদলেছে ফিফা এবং সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। নিজেদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর এমন দৃষ্টান্ত দুর্লভ। গতকাল (মঙ্গলবার) ফিফা জানায়, উত্তর আমেরিকায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই ৬০ ডলার দামের টিকিট রাখা হবে। সেই সুবিধা পাবে বিশ্বকাপ খেলবে এমন দেশগুলোর ফেডারেশন। নিজেদের অনুগত সমর্থকদের মাঝে সেসব টিকিট বন্টন কীভাবে করবে তা সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো দেখবে।
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই দলগুলো ৪০০ থেকে ৭৫০টির মতো ৬০ ডলার মূল্যের টিকিট নিতে পারবে। এই টিকিট মূল্যের ক্যাটাগরিকে ‘সাপোর্টার এন্ট্রি টায়ার’ নামে উল্লেখ করেছে ফিফা। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে ১৬টি শহরে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) মাঠ, কানাডার দুটি এবং মেক্সিকোর তিনটি ভেন্যুতে খেলা হবে। তবে নাটকীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্ত বদলের নেপথ্য কারণ জানায়নি ফিফা। তারা বলছে, ‘জাতীয় দলকে সমর্থন দিতে ভ্রমণ করা সমর্থকদের সহায়তার লক্ষ্যে’ টিকিটমূল্য কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপজুড়ে একেবারে তৃণমূলের সমর্থকদের নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ’ (এফএসই) বলছে, ‘সীমিত টিকিটের দাম কমানো বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার কৌশল। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে ফিফার টিকিটিং নীতি কোনো শক্তিশালী ভিত্তির ওপর গৃহীত নয়, বরং তড়িঘড়ি করে পর্যাপ্ত পরামর্শ ও আলোচনা ছাড়াই ঠিক করা হয়েছিল।’ এবারই প্রথম ৪৮ দল নিয়ে ফুটবলবিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বসতে যাচ্ছে। যেখানে ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে ফিফা।
এদিকে, বিশ্বজুড়ে টিকিটের দাম নিয়ে হাহাকার শুরু হলেও, ইতোমধ্যে নতুন ধাপে ২০ মিলিয়ন মানুষ টিকিট পেতে আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে প্রতিটি ম্যাচে সীমিত সংখ্যক টিকিটের দাম ৬০ ডলার করা হলেও, তা যথেষ্ট মনে করছে না এফএসই। তাদের মতে, ‘এখনও বড় একটি সংখ্যক দর্শককে অতিরিক্ত দামে টিকিট কিনতে হবে, যা আগের যেকোনো (বিশ্বকাপ) আসরের চেয়ে অনেক বেশি।’
সাত বছর আগে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়া নিয়ে বিডিংয়ের সময় প্রথম রাউন্ডের টিকিট সর্বনিম্ন ২১ ডলার করার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সকার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার সর্বনিম্ন দাম রাখা হয় ৬০ ডলার করে। তাও সেটি প্রতিটি ম্যাচে প্রযোজ্য নয়, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, ব্রাজিল কিংবা ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তি দেশের ম্যাচে টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ২৬৫ ডলার নির্ধারিত হয়। এর বাইরে প্রতিটি স্টেডিয়ামে সর্বনিম্ন দামের টিকিট বরাদ্দ করা হয় স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ। ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সমর্থকদের জন্য বিশেষ সুবিধা না রাখায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.