নাগালে সবজি, চাল-তেলে অস্থিরতা

চলতি সপ্তাহে সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি আলু ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এদিকে, কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। শুল্ক কমানো, আমদানিসহ কয়েকটি উদ্যোগ নিলেও বাগে আসছে না চালের দাম।

আমদানির খবরে মাঝে দু-এক টাকা কমলেও ফের দাম বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে দাম বাড়ানোর এক মাস পরও স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের বাজার। এখনও সয়াবিন তেলের সংকটে ভুগছেন গ্রাহক ও খুচরা বিক্রেতারা।


চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় ফসল ফলনে যে ক্ষতি হয়েছে, তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে চাল আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে আমদানি বাড়লে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কলমিলতা, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন করে সরু, মাঝারি ও মোটা– তিন ধরনের চালের দামই বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি সরু বা মিনিকেট চাল মানভেদে ৭৮ থেকে ৮২ টাকা, নাজিরশাইল মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক আগে মিনিকেট ৬৮ থেকে ৮০ এবং নাজিরশাইলের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল।

মাঝারি বা ব্রি-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চালের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। এক মাস আগে মাঝারি চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬৪ এবং মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

তিনটি বাজারে চালের দর যাচাই করে দেখা গেছে, কলমিলতা ও সেগুনবাগিচার তুলনায় কারওয়ান বাজারে দু-এক টাকা কমে কেনা যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, দুই মাস ধরে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েছে। নতুন করে চিকন ও মাঝারি মানের চাল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি বাড়লে দাম কমতে পারে।

কলমিলতা বাজারের শহিদুল হক বলেন, দাম দুই মাস ধরেই বেশি। এখন আড়তদাররা বলছেন, নতুন করে চাল নিতে হলে দাম আরও বেশি দিতে হবে।

তেলের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা অর্ডার এবং অগ্রিম টাকা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। গ্রাহক পর্যায় থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, দশ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। কেউ কেউ দাম রাখে বেশি। আবার কেউ অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করছে না।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিবাগ ও খিলগাঁও কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এক মাস ধরেই সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। দাম বাড়ানোর এক মাসের মাথায়ও বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনও পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। গত ৯ ডিসেম্বর সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রতি লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা।

বাজারে গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, পাকা টমেটো ৪০ টাকা, শসা ৫০টাকা, গাজর ৪০ টাকা, খিরা ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, সিম ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা পিস, কাঁচা কলা ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ভেন্ডি ১০০ টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫ টাকা, ধনেপাতা ৮০ টাকা ও মটরশুঁটি ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম স্বাভাবিক যাচ্ছে। সবজির বাজার স্বভাব থাকার কারণে বেচাকেনা মন্দা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে আলুর দাম। গত সপ্তাহের ৩০ টাকার আলু ৫ থেকে ১০ টাকা কমে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া দেশি রসুন ২৫০ ও ইন্ডিয়ান রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২৪০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা কেজি, দেশী মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা।

সবজি ব্যবসায়ী রাব্বি বলেন, অধিকাংশ সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা, ঝিঙা, ধুন্দুলসহ নতুন কিছু সবজির দাম বাড়তি। তবে অধিকার সবজির দাম স্বাভাবিক রয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.