সন্তানের শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া অর্জন- কেন আপনার সন্তান আপনার কথা শোনে না?

সন্তানের শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া অর্জন- কেন আপনার সন্তান আপনার কথা শোনে না?

সন্তানের শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া অর্জন- কেন আপনার সন্তান আপনার কথা শোনে না?

প্রত্যেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে, তাদের সন্তান যেন সুসন্তান হয়ে বেড়ে ওঠে, সুশিক্ষিত ও ভালো আচরণে অভ্যস্ত হয়। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায়, সন্তানদের কথা শুনাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকে, সন্তান যেন আমাদের মতো চিন্তা করে, আমাদের পছন্দ অনুসরণ করে। কিন্তু বাস্তবে, সন্তানের চিন্তা ও অনুভূতি আমাদের থেকে আলাদা। তারা আমাদের মতো বড় না হয়ে, তাদের নিজস্ব বিশ্বে জীবন কাটায়। তাই তাদের বুঝতে, তাদের মতো করে কথা বলা জরুরি।

তিরস্কার নয়, যুক্তি দিয়ে বোঝান

একটানা আদেশ ও তিরস্কার দিয়ে সন্তানকে আপনার কথায় আনার চেষ্টা করবেন না। এতে তারা মনে করবে আপনি তাদের প্রতিপক্ষ। বরং, তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং তাদের বোঝান কেন একটি কাজ করা জরুরি। যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করলে, তারা সহজেই আপনার কথা মেনে চলবে।

 তাদের অনুভূতি বুঝুন

সন্তানরা তখনই আপনার কথা শুনবে যখন তারা বুঝবে যে আপনি তাদের অনুভূতি ও মতামতকে সম্মান করেন। তাদের কথায় মনোযোগ দিন, তাদের কথা শোনার চেষ্টা করুন। একবার যদি তারা অনুভব করে যে আপনি তাদের বোঝেন, তখন তারা আপনার প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হবে এবং আপনার কথায় গুরুত্ব দেবে।

বাবা-মায়ের ঐকমত্য থাকা জরুরি

সন্তানের সামনে যখন মা-বাবা একে অপরের সাথে মতভেদ করেন, তখন সন্তান বিভ্রান্ত হয়ে যায়। সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মায়ের একমত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কোনো বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করবেন, তা কখনোই সন্তানের সামনে প্রকাশ করবেন না। নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমাধান খুঁজে বের করুন।

 সন্তানের প্রশ্নের উত্তর দিন

আপনার সন্তান যদি কোনো প্রশ্ন করে, তাকে গুরুত্ব দিন এবং সঠিক উত্তর দিন। তাদের প্রশ্নের উত্তর না দিলে, তারা হয়তো ভুল জায়গা থেকে বা ভুল মানুষদের কাছ থেকে উত্তর খুঁজে পাবে। আর এতে আপনার জন্য অনেক বিপদ হতে পারে। তাই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন, যাতে তারা সঠিক দিকনির্দেশনা পায়।

আপনার আচরণে সতর্ক থাকুন

শিশুরা শুধুমাত্র আমাদের কথা শোনে না, তারা আমাদের আচরণও অনুসরণ করে। আপনি যদি তাদের কিছু করতে বলেন, তবে আগে নিজে সেটা করুন। আপনি যদি বলেন, “সময়মতো ঘুমাতে যাও,” তাহলে আপনিও সময়মতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। যদি আপনি তাদের সামনে নিজে ভালো আচরণ না করেন, তাহলে তারা সেই আচরণও শিখবে না।

ভুল করলে শাস্তি দিন

যদি আপনার সন্তান বারবার আপনার কথা না শোনে, তাহলে কিছু শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শাস্তির মাধ্যমে তাদের বুঝান যে, তাদের আচরণের ফলস্বরূপ কি হতে পারে। শান্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিন এবং কখনোই গালিগালাজ বা চিৎকার করবেন না। শাস্তি দিলে তারা বুঝতে পারবে যে, নিয়ম না মানলে কিছু পরিণতি আছে।

বারবার এক কথা বলবেন না

একই কথা বারবার বললে, আপনার কথা গুরুত্ব হারায়। একবার বলুন, এবং তাকে বুঝিয়ে দিন যে যদি সে আপনার কথা না শোনে, তবে কিছু পরিণতি আসবে। এতে, আপনার কথা তার কাছে আরও কার্যকরী হবে।

জেনারেশন গ্যাপ বুঝে চলুন

বাবা-মায়ের জন্য বর্তমান প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বুঝে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের ছোটবেলার পৃথিবী আর আজকের দিনের পৃথিবী অনেকটাই ভিন্ন। সেই দিকটি মাথায় রেখে, সন্তানের আগ্রহ ও দক্ষতাকে সম্মান করুন। যখন আপনি তাদের পছন্দের বিষয়ে আগ্রহ দেখান, তখন সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়।

সন্তানের আত্মমর্যাদাবোধকে সমীহ করুন

শিশুদেরও নিজস্ব আত্মসম্মান থাকে। তাদের সামনে কোনো ধরনের অসম্মানজনক মন্তব্য করবেন না। “তোমার থেকে কিছু হবে না” জাতীয় কথা বললে, তারা মানসিকভাবে আঘাত পেতে পারে। তার পরিবর্তে, তাদের উৎসাহ দিন এবং জানিয়ে দিন যে ভুলের মাধ্যমে শেখা সম্ভব।

অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন না

অনেক সময় বাবা-মায়েরা তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চান। তবে এটি সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের স্বপ্ন, লক্ষ্য এবং পছন্দকে সম্মান করুন। তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিন এবং স্ব-স্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দিন।

 

আপনার সন্তানকে আপনার কথা শোনাতে হলে, তার অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বকীয়তাকে সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কটিকে বন্ধুত্বপূর্ণ, শ্রদ্ধাশীল এবং বোঝাপড়ায় পূর্ণ করে তুলুন। যদি আপনি তাদের মতামত এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে এগিয়ে যান, তবে সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও সুন্দর হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.