সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ল ১২ শতাংশের বেশি

রাজস্ব আদায় ও বিদেশি তহবিল কমে যাওয়া এবং ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে খরচ মেটাতে টাকা খুঁজছে সরকার। এ অবস্থায় সঞ্চয়কারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমাতে কয়েকটি জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের দেওয়া চার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ছিল ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এখন থেকে পাঁচ ও দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহার অনুসারে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা হবে। প্রতি ছয় মাস পরপর এসব ট্রেজারি বন্ডের সুদহার পর্যালোচনা করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেভিংস সার্টিফিকেটের সুদের হার নির্ধারণের সময় ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহারের সঙ্গে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত প্রিমিয়াম যোগ হবে।

সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে আছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

বর্তমানে, এই চার সঞ্চয়পত্রের জন্য তিনটি পৃথক হারে সুদ দেওয়া হয়।

নতুন পদ্ধতিতে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার হবে ১২ দশমিক চার শতাংশ। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বর্তমানে একজন সঞ্চয়কারী মেয়াদপূর্তির পর ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ১৫ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নয় দশমিক তিন শতাংশ সুদ পান।

তিন মাসের মুনাফা বহনকারী সঞ্চয়পত্রের নতুন সুদহার হবে ১২ দশমিক তিন শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ থেকে নয় শতাংশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিশটিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সুদহার বাড়ানো সরকারের ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়াবে। এ ছাড়াও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হবে।’

তিনি মনে করেন, ‘মানুষ হয়তো তাদের টাকা ব্যাংকে রাখবেন। তবে তা বেসরকারি ব্যাংক নাও যেতে পারে। বরং সেই টাকা সরকারের হাতেই যাবে।’

‘যেহেতু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) বেশি হারে সুদ দিচ্ছিল, তাই কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে উৎসাহী হতেন না।’

তার মতে, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

একই সঙ্গে এটি খরচ মেটাতে সরকারকে আরও নগদ টাকার যোগান দেবে বলেও জানান তিনি।

পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে নতুন সুদহার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও বিদ্যমান সুদহার সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে সাড়ে নয় শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

একইভাবে নতুন হারে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদহার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে এই হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে নয় দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এদিকে ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের সুদহার অপরিবর্তিত থাকবে।

পোস্ট অফিস টার্ম ডিপোজিটে সুদহার ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

টাকার খোঁজে সরকার: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্রের টাকা পরিশোধ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৬৫৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা হয়েছে।

অর্থাৎ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বছরে ৭৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে আট হাজার ৩৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিট বিক্রি হয়েছে।

গত জুলাই থেকে নভেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে দুই দশমিক ৬২ শতাংশ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.