সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক নয়?

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা সাজিয়া শারমিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তামিম খান।

এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক হবে না, এ মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়। অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়। এ কারণে এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। ওইদিন সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী এ রিট করেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. আসাদ উদ্দিন, মুজাহিদুল ইসলাম, জহিরুর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল ও যায়েদ বিন আমজাদ।

রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির রিট মামলাটি করেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

রিটে ২০১৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (ডিসিপ্লিনারি) রুলসের সাংবিধানিক বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়। রিট আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা এবং মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে সুপ্রিমকোর্টের ২০১২ সালের আদেশ প্রতিপালনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত রয়েছে। একই অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতি ওই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলে উল্লে­খ রয়েছে। মূলত রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।

রিট আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয় : ১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এ মৌলিক কাঠামো বিনষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। ২. সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬-এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। ৩. পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অধস্তন আদালতের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না।
সংবিধান হাইকোর্ট

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.