শীতে মোজা পরে অজু ও নামাজ পড়লে শুদ্ধ হবে?
নামাজ প্রতিদিনের অবশ্যকরণীয় একটি ইবাদত। ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নামাজ বা সালাত আদায়ের সময় অবশ্যই সতর ঢাকতে হবে। সতর ঢাকা না থাকলে নামাজ হবে না। আবার নামাজের সময় সুন্দর শালীন পোশাক পরার কথাও এসেছে হাদিসে। আর নামাজ আদায়ের অন্যতম পূর্বশর্ত অজু।
অন্যদিকে পবিত্র কুরআনে ৮২ বার নামাজের কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা সালাত (নামাজ) পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে, তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)
তবে গরমকালে প্রায় সবাই পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পড়লেও শীতে তা ভিন্ন। এই সময়ে গরম কাপড়ের সঙ্গে কেউ কেউ মোজাও পরে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো- শীতে মোজা পরে অজু করা বা নামাজ আদায় করা বিশুদ্ধ হবে কী?
মুগীর ইবনু শু’বা থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, আমি কোনো এক সফরে নবী (সা.) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (নবীজি সা.) বললেন, হে মুগীরা! লোটাটি নাও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে প্রয়োজন সমাধা করলেন। তখন তাঁর দেহে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাতের অজুর ন্যায় অজু করলেন। আর তাঁর উভয় মোজার ওপর মাসেহ করলেন ও পরে সালাত আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৬)
ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, ইহরামকারী কী পরিধান করবে? নবীজি (সা.) বললেন, সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, জাফরান বা ওয়ারস রঙে রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা পায়ের গিরার নীচে পর্যন্ত কেটে নেবে। নাফি (রহ.) ইবনু উমর (রা.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৯)।
এছাড়াও হাম্মাম ইবনু হারিস (রহ.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) কে দেখলাম যে, তিনি প্রস্রাব করলেন। তারপর অজু করলেন আর উভয় মোজার ওপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি নবী (সা.)-কেও এরূপ করতে দেখেছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮০)
একই হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ইবরাহীম (রহ.) বলেন- এই হাদিস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ, জারীর (রা.) ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
অন্যদিকে মুগীর ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসেও মোজার ওপর মাসেহ করার কথা এসেছে। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অজু করিয়েছি। তিনি অজুর সময় মোজা দু’টির ওপর মাসেহ করলেন ও সালাত আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮১)
সুতরাং, উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, প্রয়োজনে অজুর সময় মোজার ওপর মাসেহ করা যাবে, এমনকি মোজা পরে নামাজ আদায় করা যাবে।

Comments are closed.