শিশু হত্যা: সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে চার মাস বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় নারী শাহজাদি খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সোমবার (৩ মার্চ) দিল্লি হাইকোর্টকে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন ও বিধান অনুসারে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার বাসিন্দা শাহজাদি খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল চেতন শর্মা জানিয়েছেন, আবুধাবিতে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে শাহজাদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে এবং শাহজাদির শেষকৃত্য আগামী ৫ মার্চ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শাহজাদি খান আবুধাবির আল ওয়াথবা কারাগারে বন্দী ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে থাকা এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

শাহজাদির বাবা শাব্বির খানের দায়ের করা একটি আবেদনে বলা হয়েছিল—২০২১ সালের ডিসেম্বরে বৈধ ভিসা নিয়ে তার মেয়ে আবুধাবিতে যান। ২০২২ সালের আগস্টে তার নিয়োগকর্তা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটির দেখাশোনার জন্য শাহজাদিকে নিযুক্ত করা হয়। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর শিশুটি নিয়মিত টিকা নেওয়ার পরপরই মারা যায়।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ভিডিও রেকর্ডিং প্রকাশিত হয়। এই ভিডিওতে শাহজাদি খান শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করা হয়। তবে তার পরিবারের অভিযোগ, এই স্বীকারোক্তি জোর করে নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছিল। শাহজাদিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ করে তার পরিবার।

এদিকে, মৃত্যুর পর শিশুটির ময়নাতদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তার মা-বাবা।

শাহজাদির পরিবার অভিযোগ করেছে, ভারতীয় দূতাবাস শাহজাদিকে আইনি সহায়তা দিলেও তাঁকে জোর করে হত্যার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া শাহজাদিকে দেওয়া আইনি সহায়তা পর্যাপ্ত ছিল না বলেও অভিযোগ করা হয়।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শাহজাদির আপিল খারিজ করা হয় এবং ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর ২০২৪ সালের মে মাসে শাব্বির খান নতুন করে একটি ‘দয়া আবেদন’ জমা দেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে শাহজাদি তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তার মৃত্যুদণ্ড শিগগিরই কার্যকর করা হতে পারে।

এ অবস্থায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে মেয়ের আইনি অবস্থা ও সুস্থতা সম্পর্কে জানতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানান শাব্বির খান। তবে তিনি কোনো আপডেট পাননি।

ভারতের আদালত ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.