শিক্ষা সর্বজনীন হচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত!

ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সর্বজনীন করে এই স্তরকে একই মন্ত্রণালয় বা একই তত্ত্বাবধানে রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার মতো কোনো পরীক্ষা যাতে চালু করা না হয়, সেটিও ভাবছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি।

এ ছাড়া স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করা, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো, দুর্বল বা পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের মধ্যেই পৃথক ব্যবস্থা রাখা, শেখার দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়গুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ—এই তিন শ্রেণিতে গ্রেডিং করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশের চিন্তাভাবনা করছে পরামর্শক কমিটি।

কমিটি এ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটি সূত্রে সম্ভাব্য এসব সুপারিশ সম্পর্কে জানা গেছে।

বর্তমানে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। মোট বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৭টি, শিক্ষক প্রায় ৪ লাখ। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলা হয়। তবে প্রায় ৭০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটি প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ছাড়াও প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং কাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা তিন মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে। দেশের ১০টি উপজেলায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেখানকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে।

পরামর্শক কমিটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে মূল্যায়ন করেছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিতের দক্ষতা যাচাই করা হয় এই মূল্যায়নে। এতে কমিটি দেখেছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শ্রেণি উপযোগী যতটা শেখার কথা, তা পারছে না।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০০৯ সালে চালু হয়েছিল, কিন্তু ২০২০ সালে করোনার পর থেকে তা আর হয়নি। বন্ধ হয়েছিল প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। কিন্তু মাঝে ২০২২ সালে হঠাৎই আবার এই বৃত্তি পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। গত বছর তা হয়নি। তবে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এখনো তা বাতিল করেনি। প্রতিবছর বৃত্তির টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়।

তবে পরামর্শক কমিটি প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার মতো কোনো পরীক্ষা যাতে চালু করা না হয়, সেই সুপারিশ করার কথা ভাবছে। তবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক ও প্রান্তিক মূল্যায়ন (প্রথম, দ্বিতীয় ও বার্ষিক পরীক্ষা) রাখার পক্ষে তারা। পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (এনএসএ) আদলে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করবে কমিটি।

কমিটির মত হলো, বিদ্যালয়কাঠামো এখনকার মতো রেখে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন করা। প্রথমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত করা। এরপর ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করার সুপারিশের কথা তাদের ভাবনায় আছে।

উল্লেখ্য, গত শতকের নব্বই দশকের শুরুতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক সর্বজনীন শিক্ষা আইন করা হয়েছিল।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.