শাস্তির আগে সতর্কতা: আল্লাহর ন্যায়বিচারের মহান নীতি
ইসলামের মৌলিক আকিদাগুলোর অন্যতম হলো- আল্লাহ তাআলা কখনো হঠাৎ করে কোনো জাতিকে শাস্তি দেন না। বরং শাস্তির পূর্বে তিনি পাঠান সতর্কবার্তা, পথনির্দেশ এবং আত্মসংশোধনের সুযোগ। কোরআনের বহু আয়াতে এই নীতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
অজ্ঞ অবস্থায় কোনো জাতিকে ধ্বংস নয়
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এটি এ কারণে যে, অধিবাসীরা দ্বীন সম্পর্কে উদাসীন থাকা অবস্থায় কোনো জনপদকে তার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়।’ (সুরা আনআম: ১৩১)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির, আইসারুত তাফসিরসহ প্রধান তাফসির গ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে- আল্লাহ কখনো অজ্ঞতার সময় বা বার্তা না পাওয়া অবস্থায় কোনো জাতিকে শাস্তি দেন না। শাস্তির আগে তিনি পাঠান রাসুল, নাজিল করেন ওহি, দেন স্পষ্ট সতর্কবার্তা। এতে প্রকাশ পায় আল্লাহর পূর্ণ ন্যায়বিচার, অনুগ্রহ ও রহমত।
শাস্তির পূর্বে সতর্কতা আল্লাহর সুন্নাহ
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো জাতি এমন নেই, যেখানে সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি।’ (সুরা ফাতির: ২৪) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কখনো শাস্তি দিই না যতক্ষণ না রাসুল প্রেরণ করি।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৫)
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত: সতর্কতার পর অমান্যকারীদের পরিণতি
১. কওমে নূহ: নূহ (আ.) ৯৫০ বছর ধরে তার জনগণকে সাবধান করেছিলেন। দীর্ঘ সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও অস্বীকার করায় তারা প্লাবনে ধ্বংস হয়।
২. আদ ও সামুদ: হুদ ও সালেহ (আ.)-এর মাধ্যমে সতর্কতা পেলেও তারা অহংকারে সত্য প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আল্লাহর আজাবে নিশ্চিহ্ন হয়।
৩. ফেরাউন: মুসা (আ.) বারবার সতর্ক করেন, মুজেজা দেখান; তবুও ফেরাউন অবাধ্যতায় অটল থাকে। পরিণামে ডুবে মারা যায়।
এসব উদাহরণ দেখায়, সতর্কতার পর অমান্যকারীরাই শাস্তির অধিকারী। কেয়ামতের দিন অপরাধীরা আল্লাহর সতর্কবার্তার স্বীকারোক্তি দেবে। জাহান্নামিদের বলা হবে- ‘তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেনি?’ তারা বলবে- ‘হ্যাঁ, এসেছে; কিন্তু আমরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি।’ (সুরা মুলক: ৮-৯)
আল্লাহর ন্যায়নীতির দিকসমূহ
১. সংশোধনের পূর্ণ সুযোগ: প্রতিটি জাতি ও ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়
২. স্পষ্ট সতর্কতা: নবী-রাসুল, কিতাব, আল্লাহর নিদর্শন- সবই মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়
৩. প্রাকৃতিক নিদর্শনসমূহ: দুর্যোগ, সংকট ও পরিবর্তনগুলো মানুষের বিবেক জাগানোর বার্তা বহন করে
৪. অন্তরের ডাক: মানুষের বিবেক ও ফিতরা স্বভাবতই সতর্ক করে; সঠিক পথে ফিরে আসার তাগিদ দেয়
আমাদের জন্য শিক্ষা
সতর্কতাকে গুরুত্ব দেওয়া: জীবনে আসা সংকেতগুলোকে সামান্য করে দেখা যাবে না
তাওবা ও আত্মসংশোধন: ভুল হলে সাথে সাথে ফিরে আসা
সামাজিক দায়িত্ব: পরিবার ও সমাজকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করা
আশাবাদ: আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার দরজা সর্বদা খোলা; হতাশ হওয়া নয়
পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত প্রমাণ করে, আল্লাহর শাস্তি কখনো আকস্মিক বা অকারণে আসে না। এটি তাঁর পূর্ণ ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং অসীম রহমতের প্রকাশ। মানুষের দায়িত্ব হলো- সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের সংশোধন করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা বাকারা: ২০১)

Comments are closed.