শাজাহান খানকে চেয়ার দেওয়া নিয়ে হট্টগোল
মাদারীপুর থেকে আটবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানকে গ্রেপ্তারের পরদিন শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয় নিরাপত্তার চাঁদরে। ওই দিন বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশের গাড়িবহরে করে শাজাহান খানকে আদালতে আনা হয়। সাদা রঙের ভবনটির ষষ্ঠ তলার ১২ নম্বর এজলাসে শুনানির কথা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তাকে একই ভবনের দ্বিতীয় তলার ২৮ নম্বর এজলাসে নেওয়া হয় দশ মিনিট পর। শুনানির জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ এজলাসে ওঠেন বিকাল ৪টা ২৩ মিনিটে।
এ সময় কাঠগড়ায় শাজাহান খানকে বসার জন্য এক পুলিশ সদস্য চেয়ার এনে দিলে চারপাশে হইচই শুরু হয়ে যায়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একজন বলছিলেন, ১৭ বছরে অনেক আরাম আয়েশ হয়েছে। কাঠগড়ায় কোনো চেয়ার দেওয়া যাবে না।
আইনজীবীদের ক্ষোভের মুখে পরে চেয়ারটি নিয়ে বের হয়ে যান ওই পুলিশ সদস্য।
কাঠগড়ায় ‘স্বাভাবিক’ দেখা যায় শাজাহান খানকে। আদালতে তার পক্ষের আইনজীবীদের হাত উঁচিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন। শুনানির সময় আইনজীবীদের কথা শুনছিলেন। কে কে শুনানি করছেন, সেটিও দেখছিলেন তিনি। তবে শুনানির শেষভাগে তাকে কিছুটা ‘বিষণ্ন’ দেখা যায়।
এর আগে, শাজাহান খানকে এজলাসে আনার সঙ্গে সঙ্গে দোতলার সিঁড়ির পাশে লোহার গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েকজন সাংবাদিক ভেতর ঢুকতে চাইলেও পুলিশ তাদের সুযোগ দেয়নি। পরে পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ঢোকার সুযোগ দেন। তবে যাদের হাতে ক্যামেরা ছিল তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
রিমান্ড শুনানিতে এজলাস কক্ষে ছিলেন ডিএমপির প্রসিকিউশনের নতুন ডিসি নজরুল ইসলাম। এজলাসে সাংবাদিকদের প্রবেশে তিনি কড়াকড়ি করেন। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। পরে এজলাসে ছবি না তোলার প্রতিশ্রুতিতে ভেতরে প্রবেশ করেন সাংবাদিকরা।
এজলাসে কড়াকড়ির ফলে অন্য দিনের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ও হইচই কম হলেও আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেকে ‘ড. কামাল হোসেনের জুনিয়র’ পরিচয় দিলে হট্টগোল হয়।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-২ আসন (রাজৈর-মাদারীপুর সদরের একাংশ) থেকে টানা অষ্টমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাজাহান খান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিনি ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।
৩১ জুলাই ২০০৯ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। নভেম্বর ২০১৩-তে, অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় তাকে নৌপরিবহন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি শুধুমাত্র নৌপরিবহন মন্ত্রীর কার্যভার গ্রহণ করেন।