শনিবারের মধ্যে হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে যুদ্ধবিরতি বাতিল: ট্রাম্প

গাজা উপত্যকায় আটকে রাখা সব জিম্মিকে যদি শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের মধ্যে মুক্তি না দেয় হামাস, তাহলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে হামাসের পক্ষ থেকে শর্ত অনুযায়ী জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার কথা জানানোর পর ট্রাম্প এমন হুমকি দিলেন।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে গাজার সব জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলে যুদ্ধবিরতি বাতিল করা উচিত। ইসরায়েলকে ওখানে নরকের যন্ত্রণা বইয়ে দিতে বলব। চুক্তির শর্ত ভেসে যাক। ইসরায়েল ওই পরিস্থিতি পার হয়ে আসতে পারবে।’

ট্রাম্প বলেন, এক সঙ্গেই সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। দফায় দফায় তিন-চারজন করে জিম্মি মুক্তির বিষয়টির সঙ্গে একমত নই আমি।

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই হামাস তাদের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১৫ ফেব্রুয়ারি জিম্মি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে একটি ঘোষণা দেয়। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে’ এই কারণ দেখিয়ে বলা হয়, জিম্মি মুক্তি দেওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

এ ঘোষণার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এদিকে, এএফপির খবরে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, শনিবার জিম্মি মুক্তির কথা রয়েছে। তবে পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।

হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা। ছবি: সংগৃহীত

আবু উবাইদা আরও বলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাদের গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।

পরে আরেক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ‘নির্ধারিত বন্দিবিনিময়ের পাঁচ দিন আগে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘোষণা (স্থগিতের) দিয়েছিল হামাস। এর উদ্দেশ্য ছিল চুক্তির শর্ত পূরণের জন্য যাতে (ইসরায়েলি) দখলদারির বিরুদ্ধে চাপ তৈরির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা পর্যাপ্ত সময় পান। দখলদারেরা চুক্তির শর্ত মেনে চললে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে বন্দিবিনিময়ের কাজ এগিয়ে নিতে দরজা খোলা থাকবে।’

ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী যেকোনো সম্ভাব্য দৃশ্যপটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

তবে গাজা খালি করার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছে জাতিসংঘ। অনেক বিশ্লেষকেরও একই মত। ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এ প্রস্তাব। কিন্তু ট্রাম্প অনড়। সোমবার তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান ও মিসর যদি গাজা নিয়ে তার পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তিনি ‘সম্ভবত’ দেশগুলোর জন্য সহায়তা বন্ধ করে দেবেন।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি। ছবি: সংগৃহীত

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে বলেছেন, আরব দেশগুলো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরানো এবং উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া–বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে। এরপরই ট্রাম্প এমন হুঁশিয়ারি দিলেন।

এদিকে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করার কথা রয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.