দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিল এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব। শুরুতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও ক্রসফায়ারসহ নানা অভিযোগের ধীরে ধীরে পাল্লা ভারি হয়।
এ বাহিনীর সদস্যরা নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন, কক্সবাজারের টেকনাফে কাউন্সিলর একরামুল হত্যাসহ নানা ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছে। আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত গুম কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে জমা হওয়া ৩৮৩টি অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি এসেছে র্যাবের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে গুম, খুন ও নির্যাতন বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে।
এ অবস্থায় র্যাবকে বিলুপ্তসহ পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে বিএনপির গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার বিষয়ক কমিটি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, র্যাব অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এসব ঘটনা বিবেচনা করে এই কমিটি র্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছেন। পুলিশ বাহিনী যেন জনগণ প্রতি সংবেদনশীল হয় এবং জনগণকে মান্য করে। তাদের মগজে যেন এই ধারণা স্থির হয় দেশের মালিক জনগণ।
এ সময় পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে জনবান্ধব করতে পুলিশ কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন। সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এই কমিশনে থাকবে সরকারি ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই কমিশন পুলিশের কর্মকাণ্ড তদারকি ও পরামর্শ দিবে বা পুলিশ বাহিনী কোনো গুরুত্বর অপরাধ করলে তার প্রতিবিধান করবে, এতে সব রাজনৈতিক পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যার ইচ্ছা মতো পুলিশকে নিজস্ব দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা আর যাবে না। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পুলিশ বাহিনীতে আমূল পরিবর্তনের চেষ্টা থাকবে।
বিএনপির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমান জনবল প্রায় সোয়া দুই লাখ। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যুক্ত হলে তা দাড়ায় প্রায় সাড়ে আট লাখ। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার দায়িত্ব প্রতিটি বিভাগ বা জেলায় স্থাপিত পুলিশ হাসপাতালের। বর্তমানে এই সেবা বেশ অপ্রতুল। এ কারণে প্রতিটি জেলা শহরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল স্থাপন বা সম্প্রসারণ করতে হবে।
ঢাকার রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো বিভাগীয় বা জেলা হাসপাতালের কোথাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা সরঞ্জামাদি নেই। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অনুরূপ প্রতিটি বিভাগীয় বা মেট্রোপলিটন শহরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিচালনা করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও যন্ত্রপাতি সন্নিবেশের প্রয়োজন হবে।