রোজায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়ে যেভাবে

আমলের মাধ্যমে মানুষের ঈমান বাড়ে ও কমে। আল্লাহর আনুগত্য করলে ঈমান বাড়ে, অবাধ্যতা করলে ঈমান কমে। নামাজ আদায় করলে ঈমান বাড়ে, ফিতনা-ফাসাদে জড়ালে কমে। সঠিক পথে চললে বাড়ে, ভুল পথে চললে কমে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যারা সুপথ প্রাপ্ত হয়েছে, তিনি তাদের সুপথে চলার প্রেরণা বাড়িয়ে দেন এবং তাদের তাকওয়া দান করেন। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৭)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান আরও বৃদ্ধি পায়। (সূরা ফাতহ, আয়াত, ০৪)

রমজান মাসে বান্দা তার রবের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় তার ঈমান বৃদ্ধি পায়, বিশ্বাস প্রগাড় হয় এবং তাওহীদের আলোয় হৃদয় উদ্ভাসিত হয়। এ কারণেই রোজা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। বান্দাকে রবের নিকটবর্তী করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এছাড়াও রমজান বান্দা ও জাহান্নামের মাঝে দূরত্ব তৈরি করে। অনুগত মুমিন ও অবাধ্য পাপীর মাঝে পার্থক্য তৈরি করে।

রমজান মাসে ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাত্রিজাগরণ, মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা ও আগ্রহ সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। কারণ, এতে হৃদয়ের নিফাক ও কপটতা দূর হয়। ঈমানের বৃদ্ধি পায়।

এমন কিছু আমল জেনে নেই, যেগুলো ঈমান বৃদ্ধি করে:

জামাতে নামাজ আদায়: বিনয়, একাগ্রতা ও খুশু-খুযুর সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সূরা নিসা, আয়াত : ১০৩)

জামাতে নামাজ আদায় করলে মন থেকে নিফাক দূর হয়, আল্লাহর ভয় তৈরি হয়। অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে—

নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকির তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)

কোরআন তিলাওয়াত: গভীর মনোযোগের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে। কোরআনের প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা, কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং সেই শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এটা এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি অবতীর্ণ করেছি। যেন লোকেরা এর আয়াতগুলো অনুধাবন করতে পারে এবং বোধসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ, আয়াত : ২৯)

আল্লাহর জিকির: জিহ্বা, হৃদয় ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে আল্লাহর জিকির ঈমান বৃদ্ধি করে। তাসবিহ, তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল পাঠের মাধ্যমে জিহ্বা সতেজ রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো। তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, কৃতঘ্ন হয়ো না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)

তাই রমজানে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন। রাতের শেষ প্রহরে তার কাছে দোয়া মোনাজাত করুন। বেশি বেশি ক্ষমা ভিক্ষা চান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর বলুন হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সূরা তহা, আয়াত : ১১৪)

ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য শুধু দোয়া করাই যথেষ্ট নয়, বরং যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে আলেমদের শরণাপন্ন হতে হবে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো। (সূরা নাহল, আয়াত : ৪৩)

সুযোগ পেলেই আলেমদের মজলিসে যাওয়া উচিত। কারণ, আলেমদের মজলিসে যাওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথী-সঙ্গীরাও কখনো দুর্ভোগ পোহায় না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০৮)

এছাড়াও ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান অর্জন ঈমানের পূর্বশর্ত ও ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে নবী, আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আপনার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ( সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯)

এই আয়াতে আল্লাহ সৎকাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন।

দান-সদকা ও জাকাত-ফিতরা আদায়: দান-সদকা ও জাকাত-ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়। রাসূল সা. রমজানে অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি দান করতেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন যখন জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হত। জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হলে তিনি হয়ে উঠতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮০৩)

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা: আল্লাহর সৃষ্টি ও চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর তারা আসমান-জমিনের সৃষ্টি (রহস্য) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। (এক সময় তারা বলে উঠে) হে আমাদের প্রতিপালক, এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ( সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৯১)

রমজান মাস গবেষকদের মস্তিষ্ক পরিষ্কার করে। চিন্তাশীলদের চিন্তা শানিত করে। উপদেশ গ্রহণকারীদের অন্তর আলোকিত করে। এভাবে মন ও মস্তিষ্ক মহান আল্লাহর সৃষ্টি-নৈপূণ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার উপযুক্ত হয়ে যায়।

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.