রেকর্ড গড়া সিরিজ জয় শান্তদের

শ্রাবণ মেঘের মতো টেস্ট ক্রিকেটও ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। ঢাকা টেস্টে এই রং বদলের খেলা একটু বেশিই পরিলক্ষিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় যারা মনে করেছিলেন, রোববার সকালের সেশনেই বাংলাদেশ ম্যাচটি শেষ করে দেবে, তাদের অবাক করে আয়ারল্যান্ড প্রায় দুই সেশন লড়াই করেছে।

প্রথম সেশনে ২০ মিনিট বেশি খেলেও কার্টলি ক্যাম্ফার, গ্যাভিন হয়াদের প্রতিরোধের দেয়াল ভাঙতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা। সফরকারীরা হয়তো ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছিলেন এমন– বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে ২২ গজে ১১৩.৩ ওভার লড়াই করেছে তারা। নাজমুল হোসেন শান্তর মতে দারুণ একটি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে মিরপুরে। আয়ারল্যান্ডের কাছ থেকে এতটা প্রতিরোধ আশা করেননি তিনি। তাই তো ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য।’

এই সিরিজের আগেও ভালো ক্রিকেট খেলেছে আয়ারল্যান্ড। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা তিনটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশ সফরেও ওই অভিজ্ঞতা কিছুটা কাজে লেগেছে বলে জানান আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। সিলেটের ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ইনিংস ব্যবধানে হারলেও ঢাকায় লড়াই জমাতে পেরেছে তারা। ৫০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৯১ রান সংগ্রহ করে দলটি।

নিশ্চিত পরাজয় জানার পর প্রথম থেকে ধরে খেলার কৌশল নেয় তারা। বালবির্নিরা কতটা স্লো ব্যাটিং করেছেন, তা বোঝা যায় তাদের রান রেট (২.৫৬) দেখে। এই চেষ্টার পরও ২১৭ রানে ম্যাচ হেরেছে তারা। ফলে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো ইউরোপের দেশটি। এর পরও বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রতিপক্ষকে সমীহ দেখান, ‘আমার মনে হয় যে ছোট দল বড় দল বলে আসলে কিছু নেই। ওরা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছে, এটা মানতেই হবে। পঞ্চম দিনের উইকেটে ওরা যেভাবে আমাদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছে, ওদেরকে এই কৃতিত্বটা দিতে হবে। পাশাপাশি আমি বলব, আমাদের বোলাররা যেভাবে বল করেছে ধৈর্য নিয়ে, এটাও কৃতিত্ব দেওয়ার মতো।’

কিছুদিন আগেও মিরপুরের উইকেট নিয়ে ভীষণ সমালোচনা হয়েছে। টনি হেমিং সেখানে স্পোর্টিং উইকেট গড়ায় টেস্ট ম্যাচটি উপভোগ্যময় হয়ে ওঠে। উইকেট নিয়ে শান্ত বলেন, ‘মিরপুরের উইকেট যে রকম দেখা যায়, ওর থেকে অনেক ভালো ছিল। বিশেষ করে, একদম ট্রু বাউন্স ছিল এবং ইভেন ছিল আজও (ম্যাচের পঞ্চম দিন)। প্রতিটি উইকেট নিতে কষ্ট হয়েছে। আমার মনে হয়, যেভাবে ব্রেটিস ক্যাম্পার ব্যাটিং করেছে, এতগুলো বল মোকাবিলা করেছে, এসবে বোঝা যায় কতটুকু মরিয়া ছিল তারা।’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। চারটি সেঞ্চুরি ও আটটি হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ব্যাটাররা। মাহমুদুল হাসান জয় ক্যারিয়ার সেরা ১৭১ রান করেছেন সিলেটে। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৬০ রান। অধিনায়ক শান্ত ১০০ রান করেছেন সিলেটে। ঢাকা টেস্টে মুশফিকুর রহিম ১০৬ ও লিটন কুমার দাস ১২৮ রান করেছেন। দুই টেস্টের তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান অভিজ্ঞ মুমিনুল হক। মিরপুরে ৬৩ ও ৮৭ রান করেন। লম্বা সময় পর ধারাবাহিক দেখা গেল টপঅর্ডার ব্যাটারদের।

নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘এই সিরিজ শুরু হওয়ার আগে আমরা কথা বলেছি যে, দল হিসেবে আমরা কতগুলো ১০০ করতে পারি। আমাদের চাওয়া থাকে ১০০টা যেন ১০০তেই থেমে না যায়। ১৫০, ১৬০, ১৭০ বা ২০০ রানে নিয়ে যেতে বলা হয়। এই সিরিজে ইতিবাচক হলো চারটি ১০০ রানের ইনিংস হয়েছে। নেতিবাচক হলো ১০০গুলোকে বড় করতে না পারা। এখান থেকে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হলে ভালো হতো। ৫০গুলোকে ১০০ করতে হতো। আশা করি, সামনে এমন সুযোগ পেলে কাজে লাগাবে।’

টাইগার দলপতি জানান, ব্যক্তিগত ইনিংসগুলো বড় করার প্র্যাকটিস জাতীয় লিগ থেকে হতে হবে। তিনি চান জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলে জাতীয় লিগে খেলবেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলার কোটা ছুঁয়েছেন।

বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক গড়েন তিনি। ক্রিকেট বিশ্বের একাদশ ব্যাটার হিসেবে শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিক। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন। লিটন কুমার দাস টেস্টে তিন হাজার রান করার রেকর্ড গড়েছেন। মাহমুদুল হাসান জয় এক হাজার রানে পৌঁছেছেন। সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে রেকর্ড আড়াইশ উইকেটের মালিক হয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ১৩ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন। স্বাগতিকদের অর্জনের সিরিজে একটি রেকর্ড গড়েছেন আইরিশ টপঅর্ডার ব্যাটার ক্যাম্ফার। মিরপুরে সবচেয়ে বেশি বল (২৫৯) খেলে ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

You might also like

Comments are closed.