রিজার্ভ চুরি: বাংলাদেশের পক্ষে রায়
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জুরিসডিকশনাল গ্রাউন্ড মামলার রায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসেছে। ফলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনসহ (আরসিবিসি) অন্যান্য ১৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) আর্থিক গেয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিএফআইইউ জানায়, সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে (স্টেট কোর্ট) ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ও অন্যান্য ৬ বিবাদীর দায়ের করা মোশন টু ডিসমিস আবেদন গত ১৩ জানুয়ারি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত ফোরাম নন-কনভেনিয়েন্স বিষয়ে অন্যতম অভিযুক্ত কিম অংয়ের দায়ের করা মোশন টু ডিসমিস আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত আরসিবিসিসহ অন্যান্য ১৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে জুরিসডিকশনাল গ্রাউন্ডের আর কোনো বাধা থাকল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুরিকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলা দায়েরের পর আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মোশন টু ডিসমিস আবেদন করে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়েরকৃত মোশন টু ডিসমিস আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশনা দেয়।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতোই মোশন টু ডিসমিস আবেদন করে। বিবাদী পক্ষের উক্ত আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়।
নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করে, যা শুনানির অপেক্ষায় আছে।
সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীর মোশন টু ডিসমিসের আবেদনের বিষয়ে আলোচ্য রায় দিয়েছে।
আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোগসাজশ ছিল। আদালতের রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের ২০ দিনের (২ ফেব্রুয়ারি মধ্যে) মধ্যে তাদের জবাব দাখিল করার আদেশ দিছে এবং একই সঙ্গে মধ্যস্থতার নির্দেশনা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এ ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।