রাষ্ট্র সংস্কার: সুপারিশ বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ!

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলো এখন তাদের কাজের শেষ পর্যায়ে। তবে শেষ মুহূর্তে কিছু সংশোধনী নিয়ে কাজ চলছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—এসব সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে?

রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, সংস্কারের কাজ অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে না। তাদের মতে, এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে হওয়া উচিৎ। এই অবস্থায়, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করছেন, এই সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন সরকারের জন্য একটি কঠিন ও জটিল কাজ হতে পারে। কারণ, সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সরকার যে সংস্কারগুলোর সুপারিশ চূড়ান্ত করবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এছাড়া, জনপ্রশাসনের সংস্কারের প্রস্তাবের ব্যাপারে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আপত্তি রয়েছে। তারা মনে করছেন— প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত ক্ষমতা ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। অন্যদিকে, অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রশাসন আরও শক্তিশালী করা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারি মনে করেন, সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি। তিনি বলেন, এই সংস্কার যদি সঠিকভাবে না করা হয়, তবে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে যাবে। তিনি সরকারের প্রতি পরামর্শ দেন, যেন একটি গ্রহণযোগ্য এবং বৈধ জাতীয় ঐকমত্য গঠনের মাধ্যমে সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। তিনি বলেন, ছাত্রদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ তারা দেশের ভবিষ্যৎ এবং সংস্কারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন।

এদিকে, সরকার ঘোষণা করেছে, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সাথে অংশীজনদের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা দীর্ঘ সময় নেয় এবং অনেক সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।

জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি উঠেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা মনে করছে, সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত সময় নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত সময় গেলে সমস্যাগুলো আরও বাড়বে, তবে তারা নির্বাচন চান, কিন্তু সংস্কার সাপেক্ষে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.