এলপিজি ও সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করলো রানার অটোমোবাইলস। বাজাজ অটোর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় দেশে তৈরি এসব থ্রি-হুইলার এখন বাজারে পাওয়া যাবে।
শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় রানার অটোমোবাইলসের কারখানায় থ্রি-হুইলার প্লান্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এর মাধ্যমে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো থ্রি হুইলার উৎপাদনের পরে সেটা বাজারে নিয়ে আসলো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে উৎপাদন হলেও এখনো থ্রি-হুইলারটি তৈরিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো যন্ত্রাংশের জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতে হবে। তবে আমরা চাই এটা তৈরিতে সম্পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করি৷ রানার যে পথে হাটছে সেটা হয়তো অদূরেই দেখা যাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সরকার রপ্তানিমুখী শিল্প নীতি ও অটোমোবাইলস শিল্পের প্রসারে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যার ফসল হলো আজকের রানারের থ্রি-হুইলার কারখানা।
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উৎকর্ষতায় দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়তে পারে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, বাজাজ প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে আছে। রানারকেও তাদের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। না হয় পিছিয়ে পড়তে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা রানারের প্লান্টি প্রতিবছর ৩০ হাজার থ্রি-হুইলার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। বাজাজ অটোর প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ইঞ্জিনের কিছু উপাদান ছাড়াও ওয়েল্ডিং, ড্যামিস ও বডিসহ অধিকাংশ যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হবে। এই কাজের জন্য নতুন করে আরও ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
হাফিজুর রহমান খান বলেন, এই প্লান্ট স্থাপনে বিদেশ থেকে আসা ৪০০ এর মতো শ্রমিক কাজ করেছেন। তাতে বাজাজসহ দেশি আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করেছে। ব্যাংকগুলো আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশে প্রচুর অনিবন্ধিত থ্রি-হুইলার চলছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দেশে তৈরি হওয়ার ফলে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। সাধারণ মানুষের যোগাযোগের এই বাহন দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে রানারের এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে রানারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সুবীর চৌধুরী বলেন, রানার দেশের মোটরসাইকেল শিল্পে প্রথম উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ থ্রি-হুইলার শিল্পে পা রাখলাম। এই যাত্রায় বাজাজ আমাদের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমি আশা করি, এই প্রচেষ্টা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মোটরসাইকেলের মতো এই শিল্পেও আমরা সাফল্য অর্জন করবো।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাজার অটোর প্রেসিডেন্ট কে এস গৃহপতি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের প্রথম কোন থ্রি-হুইলার প্লান্ট নয়, ভারতের বাহিরে বাজাজ থ্রি-হুইলারের এটাই প্রথম কোন প্লান্ট। আমরা রানারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে বাজাজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস এসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশে ২৫ লাখের মতো থ্রি-হুইলার গাড়ি চলে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, তারমধ্য মাত্র ১ লাখ থ্রি-হুইলারের নিবন্ধন আছে। বাকীরা অনিবন্ধিত। এসব গাড়ি কোন দূর্ঘটনায় পড়লে তখন জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা কঠিন। এরচেয়ে আরও খারাপ অবস্থা ইজি বাইকের। ৫০ লাখের মতো ইজি বাইক দেশে আছে। এদের কোনকিছুই নেই। এগুলো একটা নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। দেশে থ্রি-হুইলার উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দূয়ার খুলে দিল।
দেশের রপ্তানি বৈচিত্রকরণের জন্য এই উদ্যোগ পথ দেখাবে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ এখনো তৈরি পোষাক খাতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন শিল্প দাড় করাতে হবে। অটোমোবাইল খাতে রানারের উদ্যোগ সেই পথ দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা মোটর সাইকেল রপ্তানি করছে। অটোমোবাইল খাতে ভালো করার জন্য ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড শিল্পে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর ও কাজিম উদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন উত্তরা মটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমানসহ অটোমোবাইল খাতের শীর্ষ প্রতিনিধিরা।