রাজনৈতিক অস্থিরতায় এডিপি বাস্তবায়নের হার ২১.৫২%

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি কমেছে

রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার নেমে এসেছে মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশে।

এ ছাড়া, পূর্ববর্তী সরকারের অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নেও অনেক দেরি হয়েছে। ১৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল এডিপি বাস্তবায়নের সর্বনিম্ন হার। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের যখন বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি তীব্র ছিল, সেই সময়েরই তুলনায়ও কম।

প্রতি অর্থবছরে জাতীয় সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে উন্নয়ন বাজেটের প্রকল্প নেওয়া ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের তথ্য বলছে—গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।

এর আগের অর্থবছরের একই সময় তা ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দের ২৭ শতাংশের বেশি।

গত মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ হয়েছে নয় হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা বা তিন দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচ ছিল ১২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। বরাদ্দের চার দশমিক ৬৩ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত এক দশকে বরাদ্দ বাজেটের গড়ে ৭৮ শতাংশ খরচ হয়েছে।’

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অদক্ষতা ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন আরও কমে ৭২ শতাংশ হয়।

‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দেরি হয়েছে।’

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেই তুলে ধরে। এগুলো মধ্যে সমন্বয় জোরদার ও রাজস্ব আদায়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।’

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের এই অবস্থার অর্থ দাঁড়ায় আগামী চার মাসে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি স্থবির থাকবে। আশা করা হচ্ছে, তা হবে না।

কম সরকারি খরচ কম রাজস্ব আদায়ের জন্য দায়ী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাও প্রায়ই নির্মাণ খাতের ধীর প্রবৃদ্ধিকে দায়ী করেন।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের শেষে কর প্রশাসন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল।

গত মাসে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এ বছর উন্নয়ন বাস্তবায়নের গতি ধীর। কারণ প্রথম কয়েক মাসে সরকারকে অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও সংশোধন করতে হয়। তা সময়সাপেক্ষ ছিল।’

গত জানুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন যাচাই-বাছাই দ্রুত করেছি।’

এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আশা করেন, আগামীতে বার্ষিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন দ্রুত হবে। বর্তমান প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্পে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন তেমন হবে না।

সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতি ও স্থানীয় সরকারের ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে সরকার নিযুক্ত অস্থায়ী প্রশাসকরা স্থানীয় সরকার পরিচালনা করছে। নতুন প্রকল্পের চাহিদা তাদের খুব কম।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা বলেছি। পরিকল্পনা কমিশনও নতুন প্রকল্প অনুমোদনে জনগণের চাহিদা বিশ্লেষণ করছে।’

সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এর বরাদ্দ টাকার সবচেয়ে কম খরচ করেছে। গত সাত মাসে খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বরাদ্দের ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ খরচ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ বিভাগ, ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ২৫ শতাংশ কৃষি মন্ত্রণালয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.