রাজধানীতে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, নেপথ্যে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী!

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। আহতদের মধ্যে এহতেসামুল হক (৪২) নামের একজনের অবস্থা গুরতর। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর আহত ব্যক্তির নাম ওয়াহিদুল হাসান দীপু। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। হামলার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোড ব্যবসায়ীরা শনিবার (১১ জানুয়ারি) মানববন্ধন করেছেন।

আহত ওয়াহিদুল এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমি্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। গুরুতর আহত এতহতেসামুল হক মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক।

পুলিশ জানিয়েছে, আহত এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় ‘ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা’ এহতেশামুল হককে চাপাতি দিয়ে কোপায়।

হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া আহত ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল হাসান দীপু সাংবাদিকদেও বলেন, এহতেশামুল হক ও আমি একসঙ্গেই ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) অফিস থেকে বের হই।ওনার বাসা জিগাতলায়। কখনো সায়েন্স ল্যাবের সামনে থেকে উনি রিকশা নিয়ে চলে যান। কাল রাতে উনি হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। আমি বের হই গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে ছিল দুজন বন্ধু আর ড্রাইভার। ড্রাইভার যখন সামনে যাচ্ছিল মুখোশ পরা একজনকে দেখি রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে। আমার গাড়ি যত সামনে যাচ্ছিল ওই মুখোশধারী তত কাছে আসছিল। আমি যখন ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি ব্যাক করো।এর মধ্যেই দৌড়ে এসে গাড়িতে কোপানো শুরু করল। সামনেই এহতেসামুল হককে কোপানো হচ্ছিল। উনি বারবার বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করছিলেন। আমার গাড়িতেও কোপানো হচ্ছিল। আমি তখন নিজেই দৌড়ের ওপরে।

ওয়াহিদুল বলেন, ওদের (হামলাকারীদের) এলোপাথাড়ি কোপে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়, লুকিং গ্লাস খুলে যায়। দরজা খোলার চেষ্টা করে। আমি লাথি দিয়ে একজনকে ফেলে দিই। এরপর দৌড়ে নেমে মাল্টিপ্ল্যানে ব্যবসায়ী অফিসে ঢুকে পুলিশকে ফোন করি, ৯৯৯-এ ফোন করে জানাই।

ওয়াহিদুল হাসানের অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর ইমন গ্রুপের লোকজন এহতেশামুল হক ও তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির একজন সদস্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মানববন্ধন করেন বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোডের ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধন থেকে তাঁরা অবিলম্বে ব্যবসায়ী এহতেশামুলের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিন উদ্দিন বলেন, মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির নেতা এহতেসামুল হককে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে গেছে, এমন খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু দুর্বৃত্তরা পুলিশ যাওয়ার আগেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, কয়েক দিন ধরে ইমন গ্রুপের লোকজন সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদা না দেওয়ায় একজন ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখমের ঘটনার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার কয়েকটি ফুটেজ পেয়েছি। এতে দেখা গেছে, হামলায় ১০-১২ জন অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে এক-দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। হামলায় জড়িত বাকিদেরও শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তারিক লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির নেতা এহতেসামুল হকের ওপর হামলার ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হামলায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

তারিক লতিফ আরও বলেন, ব্যবসায়ী এহতেসামুল হকের ওপর হামলার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চাঁদাবাজি বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এ হামলা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.