রাখাইনের আরও একটি শহর দখল আরাকান আর্মির

থাকল বাকি ৩

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের আরও একটি শহর দখল করেছে দেশটির প্রভাবশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। কয়েক সপ্তাহের প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে গওয়া দখল করে গোষ্ঠীটি। পরে গোষ্ঠীটির নেতারা জান্তা কর্তৃপক্ষকে আলোচনার আহ্বান জানায়।

গওয়া রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত এবং এটি দক্ষিণের জনপদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি দেশটির অন্যতম প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন থেকে ১৮৫ কিলোমিটার (১১৫ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে এবং ইরাবতী নদীর ব-দ্বীপের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।

গওয়া আরাকান আর্মির দখল করা রাখাইন রাজ্যের ১৪তম শহর। রাজ্যে এমন মোট ১৭টি শহর রয়েছে। অর্থাৎ আর মাত্র ৩টি শহর দখল বাকি থাকল। ফলে পুরো রাখাইন রাজ্য দখল করার লক্ষ্যে এটা তাদের অন্যতম বড় পদক্ষেপ।

আরাকান আর্মি জানায়, জান্তা সেনারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের যোদ্ধারা রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গওয়া নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর জান্তা বাহিনী তার বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করছে।

সেদিন আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গওয়ার কাছে কিছু এলাকায় লড়াই চলছে। জান্তা বাহিনী শক্তিবৃদ্ধি করেছে এবং তারা পুনরায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জান্তা বাহিনীর আর্টিলারি ও বিমান হামলার খবর নিশ্চিত করে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি আরও বলে, মৃতদেহ ও বন্দিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং জব্দ করা নথির ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধে ৭০০ জান্তা সেনা নিহত হয়েছে। তবে গোষ্ঠীটি নিজেদের যোদ্ধা বা বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি হয়। এরপর থেকেই ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নেয়। জান্তাবিরোধী থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের একটি হল আরাকান আর্মি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীটি। এতে চীন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায় তারা।

গোষ্ঠীটি সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জেরে নতুন আরও ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। সেটা সরাসরি না হলেও ‘ব্যাক চ্যানেলে’ করতে হবে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে দেশটি পরিচালনা করছে মিয়ানমার সরকার। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সূত্র: মিয়ানমার নাও ও রেডিও ফ্রি এশিয়া

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.