রমজান উপলক্ষে দেশে দেশে উৎসবের হাওয়া
চলছে সিয়াম সাধনার মাস। সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজেকে নিবেদন আর ইবাদত-বন্দেগির চর্চা অভিন্ন কোটি মুসলিমের। তবে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে দেশে দেশে উৎসবের হাওয়া বইছে ভিন্ন আঙ্গিকে।
মাথার ওপর ছাদ থেকে শুরু করে প্রিয় স্বজন। আরোপিত যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে সর্বস্ব। তাও ছোট্ট মানবজীবনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ফিলিস্তিনিদের। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে উঠেছে আরাধনার স্থান।
ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘মানুষকে দৃঢ় করতে, মানসিক জোর বাড়াতে এবং ঐক্যের চেতনা জোরদার করতে রমজানের চেয়ে ভালো সময় আর হয় না।’
আরেকজন বলেন, ‘দিনে পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করেছি। এই ধ্বংসযজ্ঞ আর ধ্বংসস্তূপের মাঝে মানুষের মুখে যে হাসি ফুটেছে, তার তুলনা নেই।’
ইসরাইলি আগ্রাসনের জেরে অর্থনৈতিক সংকট লাঘবের জন্য পবিত্র রমজান মাসকেই বেছে নিয়েছেন অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরাও। সারা বিশ্বে সমাদৃত হেব্রনের সিরামিক শিল্প। ভাগ্য ঘোরাকে রঙিন সিরামিক আর মাটির বাসনে অনন্য নকশাকেই বেছে নিয়েছেন শিল্পীরা। অর্ধচন্দ্রের আকারে থালা, মগ ও অন্যান্য বাসন বানিয়ে তাতে খোদাই করে আরবি ভাষায় লিখছেন ‘রামাদান কারিম’
শিল্পীদের একজন বলেন, ‘রমজান এসে গেছে, কিন্তু যুদ্ধের আগের সেই উচ্ছ্বাস আর নেই। রমজান সামনে রেখে গত এক মাস ধরে খাবার টেবিলে রাখার সিরামিকের বাসন বানিয়েছি।’
আরেকজন বলেন, ‘এই সিরামিকের বাহারি পাত্র ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের ইতিহাস, এই ভূমিতে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি, আমাদের শেকড়ের গভীরতার প্রতীয় এ শিল্প।’
পাশের দেশ মিশরে রমজানের হাওয়া বইছে বেশ। উৎসবমুখর সাজে সেজেছে শহর, নগর, গ্রাম, বন্দর। দেশটিতে বসবাসরত সিরীয় অভিবাসীরা মেতেছেন ঐতিহ্যবাহী ‘তাকরিজা’ প্রথার চর্চায়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শুরুতে রাজধানী দামেস্ক থেকে উদ্বাস্তু যারা প্রতিবেশী মিশরে আশ্রয় নেন, সময়ের সাথে তাদের হাত ধরে কায়রোতে পৌঁছেছে বহুদিনের পুরোনো এই সিরীয় প্রথায়।
এটি মূলত হরেক রকম খাবারের এক ভোজ, যেখানে পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চলে খাওয়াদাওয়া। সিয়াম সাধনার মাসে ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি জোরেসোরে চলে এ আয়োজন। বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের রন্ধনশিল্প আদান-প্রদান ও সামাজিক যোগাযোগ দৃঢ় করাও এর উদ্দেশ্য।
সিরীয়দের একজন বলেন, ‘তাকরিজা প্রাচীন দামেস্কের একটি ঐতিহ্যবাহী চর্চা। দামেস্কে যাদের শেকড়, তারা সবাই এ প্রথার সাথে পরিচিত।’
আরেকজন বলেন, ‘সিরিয়ায়, সব প্রদেশে, বিশেষ করে দামেস্কে আমাদের পরিবারের পাশাপাশি এখানে এ আয়োজন হয়। সিরিয়ায় প্রিয় মানুষদের সাথে এই রমজানে তাকরিজার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারলে ভালো হতো।’
অভিন্ন সীমান্ত না হলেও মিশরের আঞ্চলিক প্রতিবেশী, উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়াতেও চলছে রমজানের মাহাত্ম্য উদযাপন। ১০ হাজার দরিদ্র পরিবারে স্বস্তি ফেরাতে ফুড ব্যাংক কার্যক্রমের মতো উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা।
ইসলাম ধর্মে পবিত্রতম এবং হিজরি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম, সিয়াম সাধনার মাস এটি। রমজানজুড়ে সারা বিশ্বের কোটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশে দিনভর বিরত থাকেন সবধরনের খাবার গ্রহণ ও পানীয় পান করা থেকে। দরিদ্রদের সাহায্যে হাত বাড়ান বিত্তবানরা।