যে ১২ শ্রেণির মানুষ নবীজীর উম্মত নয়
নবীজির উম্মত হতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দয়া করে নবীজির উম্মত বানিয়েছেন, সেজন্য আসুন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি- ‘আলহামদুলিল্লাহ।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মধ্যেই অনেকে উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভুক্ত নয়। নিচে হাদিসের আলোকে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১. যে নবীজির সুন্নতের প্রতি বিমুখ
যারা নবীজির সুন্নত সহ্য করতে পারে না তারা নবীজির উম্মত নয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৪৬৯৭)
২. যে বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না
হজরত উবাদা ইবন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না, আর আমাদের আলেমের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট নয়।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৮/১৪)
৩. যে ব্যক্তি ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করে
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করল, অথবা যার ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি ওড়ানো হলো, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করল, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো অথবা যে ব্যক্তি জাদু করল অথবা যার জন্য জাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে এলো, অতঃপর সে (গণক) যা বলল তা বিশ্বাস করল—সে ব্যক্তি মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর যা নাজিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করল। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫/১২০)
৪. যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করো না। কেননা ইহুদিদের অভিবাদন হলো আঙুল দ্বারা ইশারা করা আর খ্রিস্টানদের অভিবাদন হলো হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা।’ (তিরমিজি: ২৬৩৮)
৫. বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব নারী পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৮০)
৬. প্রতারক
রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন স্তূপ করে রাখা খাদ্যশস্যের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপের ভেতর হাত প্রবেশ করালে আঙুলগুলো ভিজে গেল। স্তূপের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী? মালিক জবাব দিল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টির পানিতে তা ভিজে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তবে তা ওপরে রাখলে না কেন, যেন মানুষ তা দেখতে পায়? যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ১০২)
৭. যে ব্যক্তি মুসলমানের বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করে
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ওপর (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) অস্ত্র তোলে। আর যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে-ও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ১০১)
৮. শোক প্রকাশে যে নারী বিলাপ করে কাঁদে
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, মৃত্যুশোক প্রকাশে যে নারী মাথা মুড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ৩১৩০) অন্য হাদিসে এসেছে, যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বা জাহিলি যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ১২৯৭)
৯. যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ২১৭৫)
১০. যে ব্যক্তি ছিনতাই করে
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ ছিনতাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ৪৩৪০)
১১. যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না
আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা সুন্দর করে তেলাওয়াত করা তো দূরের কথা; বরং তেলাওয়াতই করতে পারে না কিংবা পারলেও বিশুদ্ধভাবে করতে পারে না। আর এভাবেই কবরে চলে যাচ্ছে! অথচ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৭০১৯)
১২. যে ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার দিকে মানুষকে ডাকে
হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসাবিয়াতের (সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ) দিকে ডাকে বা আসাবিয়াতের কারণে লড়াই-যুদ্ধ করে কিংবা আসাবিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ৫১২১)