যে ১০টি ভুলে গাড়ির তেলের খরচ বেড়ে যায়
জ্বালানি খরচ কমানো বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, যেখানে তেলের আমদানিনির্ভরতা অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা যায়, চালক ও গাড়ি ব্যবহারকারীদের কিছু সাধারণ ভুলের কারণে গড়ে ১৫-২০% পর্যন্ত অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় হয়। এই প্রবন্ধে ১০টি প্রধান ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে যেমন ভুল টায়ার প্রেশার, ভুল ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড, নকল ফিল্টার, নিম্নমানের অকটেন ইত্যাদি—যা সরাসরি গাড়ির জ্বালানি দক্ষতাকে (fuel efficiency) প্রভাবিত করে। প্রবন্ধে প্রতিটি কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট ও পরিবেশ দূষণের কারণে তেলের কার্যকর ব্যবহার এখন একটি জরুরি বিষয়। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে প্রতি বছর যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, যার সাথে বাড়ছে তেলের চাহিদাও। কিন্তু চালক ও গাড়ি ব্যবহারকারীদের অজান্তে করা কিছু সাধারণ ভুলের কারণে গাড়ি বেশি তেল খরচ করে। এসব ভুল শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে তেলের অপচয় ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। এই গবেষণা প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হলো গাড়ির তেল খরচ বাড়ায় এমন ১০টি সাধারণ ভুল চিহ্নিত করা এবং সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে কীভাবে জ্বালানি সাশ্রয় করা যায় তা তুলে ধরা।
1. টায়ারের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে অবহেলা – কম অথবা অতিরিক্ত টায়ার প্রেশার ইঞ্জিনকে বাড়তি চাপ নিতে বাধ্য করে। এর ফলে জ্বালানি খরচ গড়ে ৫-৭% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
2. ভুল সাইজের টায়ার ও রিম ব্যবহার – অতিরিক্ত বড় বা ভারী টায়ার ও রিমের কারণে রোলিং রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যায়, যা ফুয়েল কনজাম্পশন বাড়ায়।
3. পালস এন্ড গ্লাইড ড্রাইভিং না করা – ধীর ও মসৃণ ড্রাইভিং জ্বালানি সাশ্রয় করে। হঠাৎ গতি বৃদ্ধি বা হঠাৎ ব্রেক প্রয়োগ ফুয়েল কনজাম্পশন ১০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
4. ভুল গ্রেডের ব্রেক প্যাড – ভুল গ্রেড বা নিম্নমানের ব্রেক প্যাড অতিরিক্ত ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, যা ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে।
5. ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল – ইঞ্জিন অয়েল ম্যানুয়াল অনুযায়ী না হলে ইঞ্জিনের ঘর্ষণ বেড়ে যায়। এতে ফুয়েল এফিসিয়েন্সি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
6. নকল অয়েল ফিল্টার ব্যবহার – নকল ফিল্টার তেলকে সঠিকভাবে ফিল্টার করতে পারে না, ফলে ইঞ্জিনে ময়লা জমে। এর ফলে জ্বালানি বেশি খরচ হয় এবং ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
7. গিয়ার অয়েল সময়মতো পরিবর্তন না করা – পুরোনো গিয়ার অয়েল গিয়ারবক্সে ঘর্ষণ বাড়ায়। এটি ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমায় এবং ফুয়েল কনজাম্পশন বাড়ায়।
8. নিম্নমানের অকটেন ব্যবহার – অকটেন মান কম হলে দহন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় না, ইঞ্জিন নক করে এবং গাড়ি বেশি তেল খরচ করে।
9. ফুয়েল সিস্টেমে কার্বন জমা থাকা – কার্বন জমলে ফুয়েল স্প্রে ঠিকভাবে হয় না। এতে জ্বালানি পোড়ে না এবং খরচ বেড়ে যায়।
10. অতিরিক্ত ওজন বহন – অতিরিক্ত ওজন গাড়ির জ্বালানি খরচ ৫-৮% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রবন্ধে আলোচিত ১০টি ভুল হলো গাড়ির তেল খরচ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এসব ভুল এড়িয়ে চললে একজন গাড়ি ব্যবহারকারী গড়ে ১৫-২০% পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারেন। পাশাপাশি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও অভ্যাস গড়ে তুললে গাড়ির আয়ুষ্কাল বাড়ে এবং পরিবেশ দূষণও কমে।
References:
• Toyota Motor Corporation. Owner’s Manual: Fuel Efficiency and Maintenance Guidelines. 2020.
• Society of Automotive Engineers (SAE). Effects of Tyre Pressure and Oil Grade on Fuel Consumption. SAE Technical Paper, 2019.
• Bangladesh Petroleum Corporation (BPC). Fuel Consumption Report in Transport Sector. Dhaka, 2022.
• Automotive Research Association of India (ARAI). Impact of Driving Behavior on Fuel Efficiency. 2021.
• U.S. Department of Energy. Tips for Improving Fuel Economy. 2020.

Comments are closed.