২১ জুলাই মুক্তি পায় হলিউডের আলোচিত সিনেমা ‘বার্বি’। এতে দক্ষিণ এশিয়ান কেইন চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের মডেল ও অভিনেতা রমজান মিয়া। সিনেমাটির মুক্তি উপলক্ষে ঢাকায় আসেন এ অভিনেতা। ২০১৬ সালে হলিউডে যাত্রা শুরু করা এই তরুণের গল্প তুলে ধরছেন আশিক মুস্তাফা
২০ জুলাই, হলিউডের আলোচিত সিনেমা ‘বার্বি’র মুক্তির ঠিক এক দিন আগে। গোলাপি রঙে একাকার রাজধানীর এসকেএস টাওয়ারের স্টার সিনেপ্লেক্স। আমন্ত্রিত অতিথিদের গায়েও গোলাপি রঙের ছড়াছড়ি। মনে পড়ে গেল গ্রেটা গেরউইগের সাক্ষাৎকারের কথা। যাঁর কারণে সেদিন রং লেগেছে, তিনি আলোচিত ‘বার্বি’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা। এক সাক্ষাৎকারে গোলাপি রং সম্পর্কে গ্রেটা বলেন, ‘এই গোলাপি দুনিয়া তৈরি করতে গিয়ে বাজারের সব গোলাপি রংই শেষ হয়ে গিয়েছিল!’ আসলেই তাই! সেই শেষের ঘণ্টাটা যেন বেজেছে স্টার সিনেপ্লেক্সেও। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এ সিনেমায় আইকনিক ডল স্টোরি ‘বার্বি’কে সিনেমায় রূপ দিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে নির্মাতা গ্রেটা গেরউইগকে। এর চাইতেও ঢের বেগ পেতে হয়েছে বার্বি দেখতে আসা বাংলাদেশিদের! কারণ, ছবিরটি নির্মাতা এবং মূল অভিনেতা-অভিনেত্রীকে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন আমাদের রমজান মিয়া। তাই তো সবার পোশাক এবং মনে গোলাপি রঙের ছটা, আনন্দের পারদও আকাশচুম্বী!
দক্ষিণ এশিয়ান কেইন রমজান
২১ জুলাই বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মুক্তি পায় ‘বার্বি’। সিনেমায় দক্ষিণ এশিয়ান কেইন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের মডেল ও অভিনেতা রমজান মিয়া। সিনেমার মূল দুটি চরিত্র ‘বার্বি’র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মার্গট রবি ও ‘কেইন’ চরিত্রে রায়ান গসলিং। সিনেমাটির মুক্তি উপলক্ষে ঢাকায় আসেন দক্ষিণ এশিয়ান কেইন চরিত্রে অভিনয় করা রমজান মিয়া। দেশের ইতিহাসে হলিউড ছবির প্রিমিয়ারে স্বয়ং অভিনেতার উপস্থিতির ঘটনা এটিই প্রথম। সব প্রথমই একটু অন্য রকম হবে, এমনটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক আমাদের জন্য কিছুটা অস্বাভাবিকই বটে! তাই তো এখনও সিনেপ্লেক্সে দেখা যাচ্ছে গোলাপি রঙের বাহাদুরি।
হলিউডযাত্রা
২০১৮ সালে ভৌতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘গোস্ট স্টোরিজ’ দিয়ে শুরু রমজান মিয়ার হলিউডযাত্রা। অ্যান্ডি নাইম্যান ও জেরেমি ডায়সন নির্মিত ওই চলচ্চিত্রে এসথার গুডম্যান নামে এক নারীর প্রেমিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন রমজান। এরপর ২০১৯ সালে ‘রকেটম্যান’ ও ‘আলাদিন’, ২০২১ সালে ‘এভরিবডিস টকিং অ্যাবাউট জেমি’র পর একে একে ‘এনোলা হোমস টু’, ‘লিগ্যাসি’, ‘নাকা’সহ হলিউডের বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান এ অভিনেতা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রমজান মিয়া ২০২২ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফ্যাশন অ্যান্ড লাইফস্টাইল অ্যাওয়ার্ডসে বর্ষসেরা পুরুষ মডেল নির্বাচিত হন এবং একই বছর ‘হ্যালো’ ম্যাগাজিন রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
ইতিহাসে প্রথম
২০ জুলাই সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সের মহাখালীর এসকেএস টাওয়ার শাখায় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ‘বার্বি’র প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন বার্বি সিনেমায় অভিনয় করা বাংলাদেশি এ অভিনেতা! দেশের ইতিহাসে হলিউড ছবির প্রিমিয়ারে স্বয়ং অভিনেতার উপস্থিতির ঘটনা এটিই প্রথম। এ প্রসঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান বলেন, ‘বার্বির মতো আলোচিত ছবিতে বাংলাদেশের একজন অভিনয় করেছেন– এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের।’
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
রমজানের বাবা কুদ্দুস মিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটে। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ১৯৯৩ সালের ১৯ জুলাই রমজানের জন্ম যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরে। এ শহরেই তিনি বেড়ে ওঠেন। যুক্তরাজ্যের বার্ড কলেজ থেকে সংগীত ও নৃত্যে পড়াশোনা শেষ করে মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন রমজান।
৭ বছর বয়সে ক্যামেরার মুখোমুখি
হলিউড ছবিতে নিয়মিত কাজ করলেও অভিনয়ে রমজানের হাতেখড়ি বাংলা নাটকে! তাও সেই সাত বছর বয়সে। রমজান সাত বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার মুখোমুখি হন সিলেটি ভাষায় নির্মিত ‘তবুও ভালো আছি’ শিরোনামের নাটকে। নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন রমজানের বাবা কুদ্দুস মিয়া। প্রবাস জীবনের সুখ-দুঃখের কথা নিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনি। তাতে শিশুশিল্পীর চরিত্রে দেখা মেলে রমজান মিয়ার।
মনোযোগ পড়াশোনায়
অভিনয়ের পাগলামিটা যখন ঘর থেকেই আসে কিংবা যদি বলা হয় রক্তেই মিশে থাকে, তবে কি সহজে তা ছাড়া যায়? অবশ্য ছাড়তে না পারলেও বিরতি দেওয়া যায়। রমজান মিয়াও দিয়েছেন। সেটি ১৫ বছর বয়সে। সব ধরনের অভিনয় থেকে পুরোপুরি বিরতি নিয়ে মনোযোগ দেন পড়াশোনায়; একেবারে বাধ্য ছেলের মতো। পাঁচ বছর পড়াশোনায় ডুবে থাকার পর কুড়ি বছর বয়সে ফের পা রাখেন শোবিজ জগতে। এবার মডেলিং দিয়ে শুরু। সেই সঙ্গে অভিনয়ও।
আগামীর স্বপ্ন
নিজের কাজ ও আগামীর স্বপ্ন সম্পর্কে রমজান মিয়া বলেন, ‘হলিউডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। তা ছাড়া বার্বির প্রিমিয়ারে বাংলাদেশে আসতে পারাটা আমার কাছে ভীষণ আনন্দের। এটি আমার কাছে এক বিশেষ মুহূর্ত। এখানে আসার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশের সিনেমা খুব একটা দেখা না হলেও বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। এখানে এসে বেশ কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সুযোগ পেলে অবশ্যই বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করতে চাই।’
রমজান মিয়াদের হাত ধরে লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়বে পৃথিবীর আকাশে– এমন স্বপ্ন তো দেখতেই পারি আমরা!