সিরিয়ার বিদ্রোহী দলের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানির হাত ধরেই পতন হয়েছে বাশার আল-আসাদের ইস্পাত কঠিন শাসন। তার বিজয়বার্তা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব- একথা মাথায় রেখেই তাদের উদ্দেশে জুলানি বলেন,আমরা স্বীকার করছি, নতুন সিরিয়ার সঙ্গে আপনাদের স্বার্থ জড়িত।
সোমবার(৯ ডিসেম্বর) মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে আল-জুলানির বিজয়-বার্তা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে তাকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখেই এই বক্তব্য দিয়েছেন সিরিয়ার নতুন নেতা।
তার বক্তব্যে এই অঞ্চলের অন্য ক্ষমতাবানদের প্রতিও বার্তা আছে। সিরিয়াকে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে,বলেও দাবি করেন তিনি।
বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বিজয় বার্তা দিয়েছেন এই বিজয়ী নেতা। বিশ্লেষকদের মতে, তার এই বক্তব্যে লুকিয়ে আছে অন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
কোনো টিভি স্টেশন নয়, অথবা সদ্য খালি হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বা কোনো মঞ্চও নয়, রাজধানী দামেস্কের ঐতিহ্যবাহী উমাইয়াদ মসজিদে বসে তিনি বিজয় বার্তা দিয়েছেন। প্রায় এক হাজার ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি সিরীয়দের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদের তালিকার ওপরের দিকেই থাকে এই ধর্মীয়স্থানটি।
যারা আল-জুলানিকে শক্তিশালী করে তুলেছেন তাদের কথাই এই বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি। ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তার সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) যোদ্ধারা কীভাবে বাশার আল আসাদকে উৎখাত করল সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি। পাশাপাশি অন্যদের দিয়েছেন সুনির্দিষ্ট বার্তা। বলেন, ভাইয়েরা আমার, যারা দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন, অনেক দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বিজয় এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিজয়বার্তার মাধ্যমে দেশটিতে ধর্ম-পরিচয় সূত্রে বিভেদ-বিভাজন দূর করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আল-জুলানি।
আল-জুলানি বলেন, এই বিজয়ে এ অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এই অঞ্চলের ইতিহাস ছিল অনেক বিপদের ঘটনা ও উৎস, যা আজ সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এতদিন সিরিয়া ছিল ইরানের নানা অভিলাষ পূরণ, গোত্রে গোত্রে সংঘাত ও দুর্নীতি ছড়ানোর ক্রীড়াক্ষেত্র।
মধ্যপ্রাচ্যে ‘মাদকের রাজ্য’ হিসেবে সিরিয়ার যে কুখ্যাতি আছে, তা বদলানোর অঙ্গীকার করে জুলানি বলেন, আসাদের সিরিয়া গোটা বিশ্বে ক্যাপটাগন মাদকের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছিল।
Comments are closed.